যখন আমি বুড়ো হবো
![]()
যখন আমি বুড়ো হবো
কলমে– সুব্রত পণ্ডিত
সংকলন- প্রেমের ভোরাই(দ্বিতীয় খন্ড)
যখন আমি বুড়ো হবো, নড়বে শরীর, কাঁপবে দু’হাত,
চোখের আলো ফিকে হবে, ঝাপসা দেখব সুন্দর চাঁদ,
তখন তুই থাকিস পাশে, দিস ভালোবাসার সাধের বাঁধ,
হাসিমুখে রোজ রোজ ধৈর্য ধরে দিস সান্ত্বনার সুপ্রভাত।
যদি হাত ফসকে পড়ে কাঁচের বাসনখানা,
যদি তরকারি উল্টে নষ্ট হয় ষোল আনা,
স্নায়ু হবে দুর্বল, ভুল হবে রোজ বেলা,
তখন আমায় নিয়ে করিস না হাসি-খেলা,
আমায় বকিস না রে তুই, করিস না অবহেলা।
ভাঙা রেকর্ডের মতো যদি বকবক করি বারবার,
তখনও তুই শুনিস রে, খুলে রাখিস হৃদয়ের দ্বার।
সময় পেলে বসিস পাশে, বলিস দুটো কথা,
আমার একলা সকালটায় মিশুক তোর কল্পকথা।
আমার একলা দুপুরটাতে রাখিস হৃদয়ের ঝাপ্পি,
শেষ বিকেলে গল্প করব, তুই শুধু শুনিস চুপিচুপি।
একদিন শুনতে পাবো না ঠিক ঠিক, কানে আসবে না আর সুর,
তবুও বলিস আলতো করে, যেন বুঝতে পারি ঘুরে ফিরে দূর,
তবু তোর কণ্ঠের সুরে উঠুক জ্বলে একটুখানি নূর,
ভালোবাসার আলোয় ভরে উঠুক আমার শেষ ভোর।
‘কালা-কালী’ বলে ডাকিস না রে, করিস না উপহাস,
কন্ঠ যদি কেঁপে যায়, অঙ্গভঙ্গিতে বুঝে নিস আভাস।
হাঁটতে যখন পারব না, হারাব পায়ের তাল,
তুই তখন ধরবি আমায়, দিবি সাহসের পাল।
শেষে যখন শুয়ে থাকব নিঃশব্দ বিছানায়,
তুই থাকিস রে পাশে, পিচুটি মুছিস চোখের কোনায়।
হয়তো নিজে আর খেতে পারব না, চেয়ে থাকব খাওয়ার আশায়,
তখন তুই খাবিয়ে দিস অল্প অল্প করে, ছোট্টবেলার মজার ভাষায়।
নোংরা করব বিছানা, গায়ে বেরোবে প্রকট গন্ধ,
তুই থাকিস ভালোবাসায় অন্ধ।
যেমন তুই স্নান করতে চাইতিস না, আমিই করতাম ধাওয়া,
আজ সেই সুরেই তুই দিস আমায় ভালোবাসার ছাওয়া।
এই ভালোবাসাই আমায় রাখবে চিরকাল আশে,
তুই ভালোবেসেছিলি, ছিলি আমার পাশে পাশে।
আর– যখন যাব দূর দেশে, স্রষ্টার দেখা পেতে,
তোর মঙ্গল চাইব রে আমি, আশীর্বাদ দিতে বলব- সুখে থাকতে।।
![কবিকল্পলতা প্রকাশনী [Kobikolpolota Prokasoni]](https://prokasoni.kobikolpolota.in/wp-content/uploads/2020/08/pro-nw-m-logo.png)