সেই মেয়েটি
সেই মেয়েটি
-ভাস্কর পাল
দশটা পাঁচটার লোকাল ট্রেনে
চলতি গাড়ির যাত্রী সে-
সেই পথেই যেতাম আমি
ব্যাগ ঝুলিয়ে চাকরিতে।
ব্যাস্ত শহর ব্যাস্ত ভীড়ে,
তপ্ত মুখের নিঝুম বেশে-
সেই মেয়েটি স্বপ্ন বোনে, বৃথাই সেই কল্পনাতে।
চোখেতে মৃদু পাওয়ারের চশমা
চুল, কোনো রকমে গোছ করা;
মুখে করুনার ছোঁয়া-
তার মধ্যেই উত্তপ্ত এক প্রতিবাদের উজ্জ্বলতা।
বাবা নাকি কেশ লড়তেন, বিখ্যাত এক উকিল!
আইনে যেমন পটু, তেমনি সৎ সাহসী।
মেয়েও পেয়েছে বাবার মতোই সেই গুনটি
বাবার মতোই অনাচারে, প্রতিবাদের মুক্তা ঝরে।
হেসে খেলে যাচ্ছিলো চলে তাদের সুখের জীবন
হঠাৎ এলো বিপদের ছোঁয়া;
মে তখন ডাক্তারিতে ফাস্ট ইয়ার।
বাবার নাকি হয়েছে স্টোক-
মা সুগারে ভুগছে খুব।
মাথার উপর ছাতা হয়ে থাকার মতো নেই যে কেউ।
ছাড়তে হলো ডাক্তারী, ছাড়তে হলো লেখা পড়ার মোহো
এখন সে আমার মতোই দশটা – পাঁচটার ট্রেন যাত্রী।
রোজই দেখা মুখোমুখি
জানালার ধারের সিটটাতে,
গোমড়া মুখে ভাবুক চোখে-
হাতে নিয়ে ডাইরি কলম, স্তব্ধতার গল্প লেখে।
অনেক বারই চেষ্টা করি।
জানবো বলে, লেখেন কি?
সেই ডাইরি-তে!!
কিন্তু কখনো হয়নি সুযোগ
সাহস করে হয়নি বলা-
বন্ধু হবেন!!
এই ভাবেই কাটছিলো বেশ,
ছিলোনা কোনো শঙ্কা, ছিলোনা কোনো ভয়,
দশটা পাঁচটার ট্রেন ঘন্টা দুয়ের মুহুর্তটা
আর চশমা পড়া সেই মেয়েটা!!
কপালে ছোট্ট টিপ, তার মুখের গোপন স্নিগ্ধতা।
হঠাৎ একদিন নিরুদ্দেশ,
খুব খুঁজলাম যাত্রা পথে-
তারপরেতে অফিস পৌঁছে
রোজকার মত খবরের পাতাতে,
অজস্র সব খবরের মাঝে
হেডিং গুলো চোখে ভাসে,
হঠাৎ দেখি ‘ধর্ষিত এক বাংলার নারী’
আর ছবিতে সেই চশমা পড়া মেয়েটি!!
ধর্ষিত হয়েছে গত রাতে,
খবরের মধ্যে বাবা-মা’র কান্না ভাসে।
ইতিহাস গড়লো ডাইরির অন্তরেতে,
আমারে সে নির্বাক করেছে,
তবুও প্রতিদিন ট্রেনে আমার যাত্রীনি হয়েই থাকে;
সেই চশমা পড়া মেয়েটি।।