~স্বর্ণলতা~
আমি এক জীর্ণ কুল গাছ।
পুরাকালের ওই পোড়োবাড়িতে আমার বাস।
উল্লাসের চাদরে মোড়া বিলাসিতার শহরে আমার ভূমিকা প্রায় না বড়াবর।
লোকে আমাকে কেবল ফল ধরলেই চেনে।
বাকি সময় তারা যেন পাশ কাটাতেই দক্ষ।
কাটায় ঘেরা আমার ত্বক যে তাদের মনের থেকেও কুৎসিত;
তাই তো তাদের সখের পটভূমিতে স্থান পাইনা আমি।
যারা নিজের শরীরে থাকা রক্তকেই না দেখার প্রার্থনায় রত,
তারা আমার তুচ্ছ শলাকাদের সইবে কেমনে?
তাই আমিও তাদের প্রতি সকল মায়া ত্যাগ করেছি।
প্রিয় স্বর্ণলতা,
কিছুকাল পূর্বে তুমি আশ্রয় নিয়েছিলে আমারই ছায়াতলে,
আর আজ তুমিই আমাকে আস্টেপিস্টে ঘিরে রেখেছ।
জড়িয়েছ নিজের মায়ায়।
এ মায়া এমনই অদ্ভুত, যে চেয়েও আমি তোমার সঙ্গ ত্যাগ করতে পারছি না।
আমার কণ্টকের অন্তরালে তুমি গড়েছ নিজের যাত্রা পথ।
নিজ অলঙ্কারে সাজিয়েছ মোরে।
গড়েছ এতই সুন্দর যে সবার চোখ ফেরানো দায়।
তোমার সরলতার মায়া জালে জড়িয়ে থাকা আমি, ভেবেছি তোমার পরজীবী সত্তা অধিক কম যন্ত্রণা দায়ক সকলের ধিক্কারের চেয়ে।
হয়তো তোমার কাছে আনতেই প্রকৃতি আমাকে এই অন্ধকার প্রান্তরে আশ্রয় দিয়েছিল।
ওহে স্বর্ণলতা…।
আমি জানি তুমি নিজের ইচ্ছায় ভক্ষণ করো না আমায়।
এ তো শুধু তোমার আমার সাথে জীবন কাটানোর অবসাদ মাত্র।
এ কথা কেউ না মানুক, আমি মানি।
তাই তো জীবনের শেষ বিন্দুটিও লিখে যাব সেই নামে,
যে নামে ঢাকা পড়েছে আমার সকল দুর্বলতা।
সে যে আমারই, শুধু আমারই স্বর্ণলতা।