আমি কবর থেকে বলছি
যখন ছোট ছিলে কখনো অনাহারে রাখিনি
ঝরাতে দেইনি চোখের জল।
আগলে রেখেছিলাম অলিন্দে ঝড়বৃষ্টি থেকে
পুড়তে দেইনি কখনো রোদের প্রখর তাপে।
তোমাদের ভুখা উদর পরিপূর্ণ রাখতে
রিক্সার প্যাডেল মেরেছি, চাষ করেছি জমি।
নিজেকে পুড়িয়েছি রোদে
পড়াশোনা করিয়েছি ঋণ এনে কড়া সুদে।
তোমাদের আজ সবকিছুই হ’য়েছে –
শক্ত হ’য়েছে পায়ের তলার মাটি
আকাশ ছোঁয়া দালান উঠেছে
খ্যাতিতে ভরেছে ঝুলি।
দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে পান করেছিলাম শরাব
শুনে মৃত্যুর খবর দায়মুক্তি নিয়েছিলে দিয়ে মোরে কবর।
আজ তোরা বাবা হ’য়েছিস, দাদা হ’য়েছিস
ব্যস্ত হ’য়েছিস কর্মে –
মনে পড়ে কি এই বাবার কথা মর্মে?
তোদের প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে মৃত্তিকার উপর পুড়ে ছিলাম রৌদ্রে
মৃত্তিকার ভিতর কাটাচ্ছি দগ্ধে –
কখনো হাত উঠিয়ে চাস-নি রবের কাছে
রব যেন রাখে পুষ্প কাননে সুরভিত সুবাসে।
ভুলে গিয়েছো কখন দিয়েছিলে মোরে কবর
নাওনি এসে আর কোন খবর –
কবরের পাশে দাড়িয়ে পাঠ করোনি ফাতিহা
স্রস্টাকে বলোনি মোর প্রতি হতে লতিফা।
আমি কবর থেকে বলছি
খোকা অ-খোকা
এই পৃথিবীর সবকিছুই ধোঁকা
খেয়ে নিবে এই সুন্দর দেহ পোকা।
খুব অন্ধকার খোকা খুব অন্ধকার
ঈমান নিয়ে না এলে করে নির্মম প্রহার।
অন্ধকার-কে তুই খুব ভয় পেতিস খোকা –
বাড়ির অদূরে রাতের আঁধারে ডাকলে শিয়াল
তুই তোর মা’কে জড়িয়ে ধরে রাখতিস।
আমার মতো বোকামি করিসনে খোকা
নিজের জন্য কিছু পাথেয় জোগাড় করিস
সুদীর্ঘ পথ, পদেপদে ভয়ঙ্কর ফাঁদ –
আলো নেই, আকাশ নেই, নেই নির্মল বাতাস।
আমি তোদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারিনি
দীক্ষা দিতে পারিনি কোরআন-হাদিস
কাজে আসবেনা বেলা হারিয়ে যদি কাঁদিস।
করিসনে আমার মতো বোকামি
কবরে এলে বুঝবি ক্যামন কষ্ট সাপের লেজে চুলকানি
নাতি-নাতনিকে দাও কোরআন-হাদিসের দীক্ষা
কবরের পাশে দাড়িয়ে মাঙ্গবে ক্ষমা ভিক্ষা
অন্ধকার ঘরে করবো আমি সেই দিনের প্রতীক্ষা।
আমি কবর থেকে বলছি
পুড়ছি দুর্নিবার আগুনের লেলিহান শিখায়
বিষাক্ত ধোঁয়া, বিষাক্ত পোকা-মাকড়
আমাকে খেয়ে ভর্তি করে তাদের উদর।
এখানে লড়াই নেই ক্ষমতার, চাটাচাটি নেই পা
ঈমানের শক্তিতে হচ্ছে পার –
বেঈমানদের খেতে হয় নির্মম মার।
০৮/০৯/২০২২ সৌদি আরব