দেওয়ালে টাঙানো তোমার ছবি

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

সেদিন লিখতে বসেছিলাম কবিতা,
“যদি দেখো দেওয়ালে টাঙানো আমার ছবি”।
সময়টা ছিল সকাল ৯টার কাছাকাছি।
লিখতে লিখতে হঠাৎই বুকের বাঁদিকে তীব্র ব্যথা ওঠে সেই সাথে অসহ্য মাথার যন্ত্রনা।
আমি চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে টেবিলে পড়েছিলাম-
আর মনে ছিলনা কিছু।

আমি দেওয়ালে সুমিতার ফটোটা টাঙালাম,
আর তাতে দিলাম একটা রজনীগন্ধার মালা।
আমার স্ত্রী।
কিন্তু ওর মুখে যেন কেমন একটা ভাব দেখেছিলাম,
ঠিক কাউকে মনের কথা বলতে না পারলে যেমন হয় তেমন।

পরে যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি,
পাশে বসে আছেন একজন নার্স।
আমায় দেখে বললেন, কেমন আছেন এখন?
আমি ধীরে ধীরে বললাম, ভালো আছি।
কিন্তু, আমার কী হয়েছিল একটু বলবেন?
নার্স বললেন, একটা মাইল্ড হার্ট এ্যাটাক-
তাই বেঁচে গেলেন।
ঈশ্বর রক্ষা করেছেন।
আরও বললেন, আজই আপনার ছুটি হয়ে যাবে।
আমি ডক্টরকে ডেকে নিয়ে আসি,
উনি উঠে চলে গেলেন।

আমার হাতঘড়িটা বালিশের পাশেই ছিল,
সময় দেখেছিলাম রাত ৮টা।
বুঝতে বাকি ছিলনা, এই দশ এগারো ঘন্টা ধরে হাসপাতালে রয়েছি।

হঠাৎ খেয়াল হয়েছিল সেই দৃশ্যটার কথা।
আচ্ছা, জ্ঞানহীন হওয়া অবস্থাতেও কি মানুষ স্বপ্ন দেখে-
কিন্তু আমি যে দেখলাম?
সুমিতার ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে মালা দিচ্ছি!
উফ, এমন অবাস্তব স্বপ্ন যেন আর কোনদিন না দেখি!
ওর কি কিছু বিপদ হল?
ঈশ্বর ওকে ভালো রেখো।
মনটা যেন কেমন হয়ে গেল,
স্বপ্নে তো অনেককিছুই দেখা যায়-
তাই বলে এইরকম?
মনকে বোঝাই স্বপ্নের কোনো প্রকারভেদ থাকে না।
পরে ডাক্তার এসে কিছু ওষুধ লিখে দিলেন আর ছুটি দিলেন।

আমি হাসপাতালের বাইরে এসে দেখেছিলাম-
এক ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ধীরে ধীরে গাড়িতে উঠলাম।
গাড়ি চালু করে সে বলেছিল, আজ সকালে আপনার প্রতিবেশীরাই আমার এ গাড়ি ঠিক করে আপনাকে এখানে আনে।
আপনাকে ভর্তি করিয়ে তারা চলে যায়,
সেই থেকে এখানেই আছি।

আধঘন্টা পরে বাড়ি পৌঁছলাম।
একে রাত অনেক হয়েছে,
তার উপর গোটা পাড়াটা যেন আরও থমথম করছে।
এক গভীর শোকের ছায়া যেন নেমে এসেছে।
বাইরে থেকে ডাক দিলাম-
সুমিতা সুমিতা।
দেখো আমি এসেছি।
কেউ সাড়া দিলনা।
সদর দরজাটায় দেখলাম ভিতর থেকে কোনো ছিটকিনি দেওয়া নেই,
ঠেলতেই খুলে গেল।
আবার ডাকলাম, সুমিতা সুমিতা
দেখো আমি এসেছি, সুমিতা।
এ ঘর ও ঘর খুঁজে চললাম-
কোথায় নেই ও।
কী ব্যাপার?
বাড়ি নেই সুমিতা?
কোথায় গেছে ও?

হটাৎ শুনলাম বাইরে থেকে কে আমার নাম ধরে ডাকছে-
অর্ঘ্যদা অর্ঘ্যদা।
এসে দেখি সুজয়।
বল রে।
বৌদি আর নেই,
বৌদি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে চিরকালের জন্য।
কথাটা শোনা মাত্র আমার মাথায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য বোধহয় আকাশ ভেঙে পড়েছিল।
বললাম, কী কথা বলছিস তুই জানিস?
দাদা শোনো তোমাকে পুরো ঘটনাটা বলি।

তুমি সকালে তোমার লেখালিখির কাজে যখন ব্যস্ত ছিলে-
তখন হঠাৎ নাকি একটা জোর চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ো।
বৌদি পাশের ঘর থেকে এসে দেখে তুমি টেবিলে মাথা নিচু করে পড়ে আছ,
কান্নাকাটি করে সারা পাড়া এক করে দিয়েছিল,
তারপর আমরাই তোমায় হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে এসেছিলাম।
ইতিমধ্যেই তোমার বাড়িতে ঘটে গেছে এক ভয়াবহ ঘটনা।
ঠাকুর পূজা করার সময় কীভাবে বৌদির আঁচলে আগুন লেগে যায়-
যখন ঘটনাটা ঘটেছিল তখন পাড়ায় কেউ ছিলনা,
সবাই গিয়েছিল তোমার সাথে।
এসে দেখেছিলাম বৌদির দেহটা আগুনে পুড়ে গেছে একেবারে,
মুখ আর বোঝাই যাচ্ছিল না।
সৎকার করে ফিরেছিলাম সন্ধ্যা ৬টায়।

আমি কয়েক মিনিটের জন্য বোবা হয়ে গিয়েছিলাম।
সুজয়ের সামনেই হাউহাউ করে কেঁদেছিলাম-
ও আর কী বা করবে?
আমায় ধরে ধরে বিছানায় শুয়ে দিয়েছিল।
সে রাতে আর ঘুমোতে পারিনি,
সারা রাত কেঁদেছিলাম।
ক্রমশ সব বুঝতে পেরেছিলাম-
দেওয়ালে ছবি টাঙিয়ে মালা পড়াচ্ছি আমার সুমিতাকে।
ভেবেছিলাম, কী কল্পনা আমার মাথায় এসেছিল, আর কী হয়ে গেল!
যদি কল্পনাটাই না আসতো তাহলে কি এমনটা হতো?
নিজেকে নিজেই খুনী মনে হয়েছিল।

আর ভগবান,
তিনি বাঁচাতে পারলেন না?
তাঁর সামনেই ঘটে গেল এমন ঘটনা!

আজও আমি ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাই এই কথাটা চিন্তা করলে।

—- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
২৪মে,২০২৩,বিকাল, বারুইপুর

0

Publication author

1
আমার নাম অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী।
ডাক নাম সঞ্জু। জন্মস্থান:- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরে। বর্তমান বাসস্থান:- পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বারুইপুর শহরে।
Comments: 4Publics: 200Registration: 18-04-2023
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।