পাগলী কথা: আলাপ

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

আচ্ছা তুই যে দিনরাত্রির এত বকবক করিস, শোনার লোক কই ?
কেন, তোকে আমার দেউড়িতে রাখলাম কি জন্যে তাহলে ?
সেতো আমিই যেচে এলাম তোর দেউড়িতে, তোর চাকরি করবো বলে ! তোর হাত পা বাঁধা বেলাগাম মনটার হাকুপাকু দেখে !
লাগাম পড়াবি সেটায় ?
উঁহু, লাগাম পড়ালে ডাহা লোকসান, সে বাণিজ্য আমি করিনা !
তাহলে ?
আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলবো, এই মাইনের শর্তে।
যদি আমি তোর লষ্করি স্বীকার না করি ?
কোনো বাঁধাধরা গত নেই এই চাকরিটায়, যখন ইচ্ছে তুই হাঁক পারবি, “লস্কর হাজি-র ! পেয়াদা হাজি-র ! খাদেম হাজি-র ! দেখবি ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সদ্দার তোর দরজাতে ‘বহুত খুব !” বলে সেলাম ঠুকছে !
বদলে তোর কি চাই বলতো, বহালের আগে আমার সাধ্য দেখে নিই। বকেয়া না মেটাতে না পারলে দুর্নাম হবে যে !
সে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, এ চাকরিতে যত বকেয়া তত লাভ ! লোকসানের ব্যাপারটাই চুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন ? লোকসানের কিচ্ছু নেই ?
পাগল, লোকসান দিয়ে দেউলিয়া হয়ে মরি আর কি !
ভাল কথা, ওই পাগল বললি বলে মনে পড়লো, আমাকে তো সবাই পাগলী বলে, বলে অচেনা দখিনা বাতাসে চিরস্থায়ী বায়ু রোগ ধরেছে ! মরণ বিনা ওষুধ নেই ! তোর কিছু জানা আছে এ ব্যাপারে ?
জানা আছে মানে ? সব জানা আছে ! সব ! আদ্যপান্ত, সব বেত্তান্ত ! শুনতে চাস তো বলতেই পারি ! তোর চাকরিতে বহাল হচ্ছি কিনা !
বল তাহলে !
সে খুব সোজা, এ পথ যেমন সোজা পথে চলে, তেমনি ইচ্ছে হলেই বাঁকা পথের সওয়ারি হওয়া যায় !
এ আবার কি, কথা হচ্ছিলো বাঁচা মরার, সোজা বাঁকা রাস্তার কথা বলিস কেন ! ভূত কোথাকার !
পথেই তো লুকিয়ে আছে সেটা ! ওই বাঁচা মরার কায়দাটা সবাই জানেনা !
তবে আবার মরণেরও রকমফের আছে কিনা ! মরে মরা যায়, মরে বাঁচা যায় ! আবার তেমনি বেঁচে মরে থাকা যায়, আর এমন মরণও হয় যে বেঁচে থাকাটাই খালি বাকি থাকে, তখন সে বেঁচে যে কি আনন্দ কি বলবো !
সেটা আবার কি ! তুই কোনটা ?
এখনও তোকে বলার সময় আসেনি, তবে হাল হদিস মিলেছে বেশ ভালো মত। চলতে চলতে তুই নিজেই বুঝতে পারবি !
সে আবার কি রকম ! এতো হেয়ালি করিস কেন ! সোজা কথায় সোজা কথা বলতে কি তোর বারণ ?
পরিষ্কার হয়ে যাবে সব ! নিজেই বুঝতে পারবি ! তখন বাঁচা মরা ব্যাপারটা থাকবে পায়ের তলায়, পক্ষিরাজের কাঁধে চড়ে দখনো হাওয়ায় সওয়ারী হয়ে ছুটবি, কানের পাশে দিয়ে মন্দ ভালোর নানান হাওয়া শন শন করে কেটে যাবে, পাত্তা করতে পারবে না তোর ! দেখবি, দখনো হাওয়ার কাঁধে সওয়ারিতে কেমন লাগে !
আমার তো শুনেই ভয় ! তোর ভয় করেনি ?
প্রথমে করেছিল বই কি !
কি করলি ?
ভয়টার কাঁধে বেশ করে চেপে বসে সেটাকে বললাম, এবার চল তো দেখি তোর ভয়ের এলাকায় !
বেশ, তারপর ?
তারপর খুব সোজা, ভয়ের তো ভয় ছাড়া কিছু নেই, কেউ নেই, ভয়ে সব্বাই তাকে ছেড়ে গিয়েছে !
তাহলে ? সে তোকে কাঁধ থেকে নামিয়ে দিল বুঝি ?
উহু, কেঁদে কেটে বললো, সাথে নিতে, তার নিজেকে নিয়ে বড় ভয় !
নিলি ?
নিতে হবে কেন আলাদা করে ভয় বলে দাগিয়ে ? এ পথ তো সবার, তবে তার আগে দেখে নিতে হবে কতখানি খাঁটি আর কতখানি ভেজাল !
ভেজাল হলে ? এক্কেবারে বাদ ? বেচারা !
না রে, এ পথে কারো নাম কাটা যায় না। বরং ভেজাল হলে বেশি যত্ন !
কে যত্ন করে ?
সে আছে একজনা, মস্ত সওয়ারি ! সূর্যের মত তার গায়ের রং, ভোরের বাতাসের মত তার গতি, ঝরনার মত চলার ছন্দ, বাঁশির মতো তার গলার স্বর ! তার সৌরভে ম ম করে সমস্ত পথ।
আর ? আর একটু তার কথা বল না শুনি ! তার কথা শোনার জন্যে মন যে ছটফটিয়ে উঠলো যে বড় ! মনে হলো নাম শুনেই যেন পড়লাম তার চক্করে !
সে কথা আর এক দিন হবে!
না, বলবি না তাই বল ! কৃপণ!
সে তুই বলতেই পারিস, কিন্তু আসল ব্যাপারটা তা নয় ! জল খেতে কীরকম সে তুই যেমন বলতে পারিস না, খানিকটা তাই !
ও ভাল কথা, আমার খুব তেষ্টা জানিস ! জল খেয়ে খেয়ে সাধ মেটেনা !
তার প্রতিকারও আছে !
কি ? আরো অনেক জল ?
ধ্যাৎ ! কখনও শুনেছিস মাছের জল তেষ্টা পায়, অথবা হাওয়াকে নিশ্বাস নিতে হয় ?
ধুৎ, সে কখন হয় নাকি ? তুই তো দেখছি একবারে একটা বদ্ধ উন্মাদ !
তবেই বোঝো, বদ্ধ উন্মাদ না হলে তোর দরজায় পেয়াদা হয়ে চাকরি চাই !
ঠিক আছে, পেয়াদা বহাল ! তোকে কি বলে ডাকবো ? সত্যি করে বল তো তুই কে !
আমি ‘কেউ না’! ‘কেউ না !’ বলে ডাক দিলেই দেখতে পাবি তোর দরজায় লস্কর হাজির !
‘কেউ না’ তুই জানিস, অনেক দিন পরে আমার বেশ ভাল লাগছে ! ঘুম ঘুম পাচ্ছে !
বেশতো, ঘুমো পাগলী, ‘কেউ না’ তোর সিং দরজায় পাহারায় রইল। কেউ এলে বলবো “কেউ না”র প্রিয় পাগলী রুপোর কাঠি বুকে ছুঁইয়ে ঘুমের দেশে ঘুরতে গেছে। পাটোয়ারী সাবধান !
বেশ, তবে তাই থাক। থাক তুই আমার কেউ না হয়ে ! তুই কিছুতেই কেউ হবিনা, বেশ !
বেশ !

0

Publication author

offline 6 months

হিয়া রাজা

15
হিয়া রাজা কতখানি কবি জানিনা কিন্তু চেষ্টায় আছে বেচারি। আদতে যন্ত্রবিদ, কিন্তু আন্তর্জাতিক কর্পোরেট জগতে বজ্জাতি করছে দীর্ঘদিন।হিয়া রাজা প্রবাসী, কবিতা লেখে খেয়ালে, নিজেকে কবি বলেনা, পাঠক কবিতা পড়ে সুখী হলে তার ওপরে কথা নাই।
Comments: 28Publics: 66Registration: 19-08-2023
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।