বাসভূমি রেখেছে সাজিয়ে

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

এক’পা, দু’পা করে, করে,
এগিয়ে আসছে ধীরে, ধীরে,
আর মাত্র কয়েকটা পা দূরে,
এই বাড়ি’টা এখনও বসে আছে।
নদী ভাঙতে, ভাঙতে………ভাঙতে, ভাঙতে,
জমি, বাগান, ভিটেমাটি সব যায় চলে।
সর্বশ্রান্ত-এর, চোখের জল যায়,
চিহ্নটুকু, কেড়ে নিয়ে, স্রোতে যায় ভেসে।
এ বাড়ি এখন গৌরবহীন, জীর্ণ,
আমার বাসভূমি, বসে আছি, আগলে নিয়ে,
কত পুরনো! ঠাকুরদার আমলের,
তিনতলা, প্যাঁচানো সিঁড়িখানি বেয়ে।
বড় বড় জানলায়, গঙ্গা আটকানো থাকত,
জমি, বাগান-এর, মাটি যেত ছুঁয়ে।
এক জানলা থেকে আর এক জানলা,
দৃশ্যগুলো খালি যেত বদলে, বদলে।
আমার ছোট্ট বেলার উঠোন,
এখন, একা, একা দোল খায়,
লুকিয়ে, লুকিয়ে উঠোন থেকে বাগান,
আর বাগান থেকে নদীর ঘাট।
মাছ, কচুরিপানা, শ্যাওলা ও ঝাঁঝিদের সাথে,
আমার লুকনো যোগ আস্তে, আস্তে গড়ে উঠত।
অদৃশ্য হয়ে যেতাম, গভীর তলদেশ,
ভরে উঠত, আমার রঙিন এ্যাকরিয়াম।
শ্রাবনের কালো কালো মেঘ এসে,
ভাসান দিত ভরা নদীর বুক জুড়ে।
ছল ছল ঢেউ ভাঙা জলের আঘাত নদীপাড়ে,
ঝুপ ঝাপ করে মাটিরা যেত সরে।
তারপর থেকে, যে সুখেরা যখন তখন ভাবে,
ছুটে বেড়াত, বাড়ি আর বাগান জুড়ে,
এক, এক করে আশ্রয় নিল কোনোমতে,
মুখ গুঁজে থেকে, ঘরের নিরাপদ কোনে।
বাবার মুখে শুনতাম, তাঁর ছোটবেলা,
সন্ধের পর, অন্ধকারে ডুব দিত এ বাড়ি।
লন্ঠনের আলোয়, ভেসে যেত, জেলে-নৌকারা।
বাঁশঝাড় জুড়ে, সারারাত জোনাকিদের মোমবাতি।
সে আলোয়, নদীর সামনে, দিগ্বিদিক শূণ্য,
কত আনন্দ জড়ো হ’ত সাদাবালি, চিকচিক!
কিংবা,ব্যাঙের ডাক টিপ টিপ বর্ষায়,
দুচোখে কিভাবে জড়িয়ে আসত, ঘুম।
কতদিন, কতবছর, নিরাপদে থাকব?
জানিনা, এ কঠিন প্রশ্নের উত্তর।
হয়ত, আমিও সবার মত ছুটব,
ভেঙে যাবে আমার রঙিন এ্যাকরিয়াম।
যে যেখানে পারে চলে যাবে,
নিরাপদ কোন ছেড়ে,এসেছে সবাই বাইরে।
হয়ত, শ্যাওলা ঝাঁঝিরা নিয়ে যাবে আরও গভীরে,
আমার শেষ আশ্রয়ের বাসভূমি, রেখেছে সাজিয়ে।

0

Publication author

1
From durgapur, burdwan
Comments: 0Publics: 232Registration: 20-07-2021
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।