মধ্যবিত্ত।
ভোর না হতেই ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে পড়ে সে কাজে,
সারাটা দিনই কর্মক্ষেত্রে–গৃহে ফেরে সেই সাঁঝে।
কখনো বা সেই ফিরতে ফিরতে হয় ত’ মধ্য
রাত,
শ্রান্ত শরীর – বিনিদ্র নিশা – সততই সংঘাত।
এমন ভাবেই দিনগুলি যায় যন্ত্রের ন্যায় কেটে,
মাস ত’ চলেনা–বেতন যা মিলে–উদয় অস্ত খেটে।
ওরা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিভু অভাবী ত’ চিরকাল,
নুন আনতে পান্তা ফুরায়,চাল আছে নেই
ডাল।
দেশের পতাকা তাদেরই স্কন্ধে – ঐ চাকুরে মধ্যবিত্ত ,
তাদের করেই উচ্চশ্রেণীর ভর্তুকি বাড়ে
নিত্য,
বিনোদন থেকে বিদেশ ভ্রমণ – মধ্যবিত্ত ফাঁসে,
সন্চয়ে সুদ প্রতিদিনই কমে – তবুও যে তারা হাসে।
তাদের অর্থ ক’রে লুটপাট ধনিকের কর ভরে,
বিদেশের যত আমদানী করা নামী দামী গাড়ি চড়ে।
এমন করেই একদিন তারা পলাতক দূরদেশে,
দেখেও না দেখে প্রশাসন হায়–আড়লে কেবল হাসে।
মধ্যবিত্ত–জীবন কঠিন–যণ্ত্রণা পদে
পদে,
স্রোতের বিমুখে যুঝে এরা সদা জীবনের
মহানদে।
ধনী কি গরীব–কাহারও বুঝি বা থাকে না অভাববোধ,
আর নৈতিকতার সাঁড়াশির চাপে বাকিদের
শ্বাসরোধ।
চাকুরীজীবী মধ্যবিত্ত– গত জনমের শাপ,
সারাটা জীবন কেবল দহন সং যে সারের চাপ।
প্রথম জীবনে মধ্যবিত্ত ভাবে ত’ অনেক কিছু,
হায় জানতে পারে না স্বপ্ন কখন নিয়েছে যে তার পিছু।
বাস্তবতার সমুখে যখনই তখনই স্বপ্নভঙ্গ,
বড়ই করুণ হায়রে তাদের এমত জীবন রঙ্গ।
বহু সমস্যার মুখোমুখি–তবু বুকে বল মুখে হাসি,
পরাজয় ওরা কভু নাহি মানে–বলে’জীবনকে ভালবাসি’।
কত মনীষীর জন্ম দিয়েছে যে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী,
তাঁদের জীবন কাহিনী মুছায় চিত্তের যত গ্লানি।
চরৈবতি,চরৈবতি – মধ্যবিত্ত ব্রত,
এগিয়ে চলার সংগ্রামে ওরা অবিচল,
অবিরত।
মধ্যবিত্ত স্থাপন করেছে এই সমাজের ভিত্তি,
গর্বিত তারা–বরিষ্ঠ শ্রেণী–নয় কোনো অত্যুক্তি।
আপন অংসে এই সমাজের লয়েছে তারাই ভার,
ওরা চাকুরীজীবী মধ্যবিত্ত– জয়ই কণ্ঠ হার।
মধ্যবিত্ত এই সমাজের মহিমান্বিত অংশ,
ওদের বিহনে সমাজের লয়–হবে পৃথ্বীর ধ্বংস।
—————————-
স্বপন চক্রবর্তী।