মায়ের বকুনি
গাঁও-গেরামে ছিলো মোর বাড়ি
স্কুলে যেতাম সুদীর্ঘ পথ দিয়ে পাড়ি।
যখন ভাবি নাকেমুখে কাঁথা মুড়িয়ে
ক্যামনে গেলো সোনালী দিনগুলো ফুরিয়ে।
মনে হচ্ছে এইতো সেইদিনের কথা
পুরো বাড়ি ঢেকে রেখেছিলো বাহারী লতা।
কটকি আর পিছন্দী গাছের সারি —
দূর থেকে মনে হতো জঙ্গলের ভিতর ভুতের বাড়ি।
আসতো না কেউ ভরদুপুরে, রাতদুপুরে ফাঁকা
ধুকপুক করতো বুক,কপোলে উঠতো পথিকের চোখ।
ছিলাম আমি সভ্য বাপের অসভ্য ছেলে
ভয় দ্যাখাতাম পথিক একেলা পেলে।
ঝিলের কাঞ্চিতে বাঁশ ঝাড় –
একদিন খেয়েছিলাম মায়ের হাতে শক্ত মা’র।
হাতে দা নিয়ে দস্যু ছেলের মতো ঘুরে বেড়াতাম
বাঁশ কেটে ছোটছোট খেলনাঘর বানাতাম।
ফুইট পাতার ছাঁদ, ফুইট পাতার বেড়া —
পাড়ার কতিপয় ছেলে দ্যাখতো হ’য়ে ত্যাড়া।
তপ্ত রোদে গিয়েছিলাম বাঁশের কঞ্চির খোঁজে —
হঠাৎ দ্যাখি আবু বক্কর মুছুই নিচ্ছে লুঙ্গির কোর্চায় গুঁজে।
আমায় দ্যাখে ব’লে “আয় বাপ-জ্বী, মিলেমিশে খায় মুছুইর সবজি”
“লঙ্কা গুঁড়ায় মিশিয়েছি লবন, মোদের মুছুই খানা দ্যাখবে দক্ষিণা পবন”।
এমন কথা শুনে, দা দিয়ে কুপ দেই একখানা গুনে
বক্করের কান কেটে যায় পৌনে – মা দৌড়ে আসে চিৎকার শোনে।
বলছিনা ভাই কথা মিছা, মায়ের হাতে ছিলো টোন্ডা ঝাড়ু পিছা
আচ্ছামতো ঝেড়ে ফেলে আসে কটকির ঝোপে
পড়েছিলাম আমি বটগাছের ভূতের তুপে।
পুরো রাত্রে ছিলাম আমি বটগাছের গর্তে
ভূতেরা সব চেয়ে ছিলো পাঠাতে মোরে মর্ত্যে।
বাড়ি ফিরে যেতে মায়ের ছিলো মানা
দস্যু ছেলের দস্যিপনা,ভূতেরা সব হ’য়ে যায় কানা।
কটকি খেয়ে ভেটকি দিলে ভূত পালাতো ভয়ে
দিন কাটিয়ে ছিলাম আমি ছাগল-লাদি খেয়ে।
সারা বাড়ি ঘুরে মা বলতেন ” বাছাধন ওরে —
পিঠের মধ্যে বাইন্ধা আসিস ধারি —
মাটিতে পড়বে না একটাও পিছার বারি”।
এমন কথা শুনে শুকিয়ে যেতো কলিজার পানি
আছে নাকি আজ মোর কপালে শনি —
রেডিও-র মতো চলতো মায়ের বকুনি
আনন্দে মাথার উপর তাক-ধিনা-ধিন নাচতো শকুনি।
বাবা স্কুল থেকে ফিরলে বাড়ি
মা মারতো বাবার সাথে ঝারি
তোমার ছেলে হেন করেছে -তেন করেছে
ঘরের কুনোব্যাঙ মেরে উঠোন ভরেছে।
বাবা কভু দেয়নি অন্যের পাকা ধানে মই
এমন বাবার ঘরে জন্ম নিয়ে শয়তানের সাথে পেতেছি সই
সব স্মৃতি আজ ভাসে স্মৃতির পাতায়
ব্যাথারা সব কেঁদে দুচোখ ভাসায়।
২৩/০৮/২০২২ সৌদি আরব