মেঘনা নদীর মাঝি
শহর থেকে ডিগ্রিধারী জোয়ান এক বাবু
মেঘনার পাড়ে গিয়ে ভাবছেন বসে
কি উপায়ে হবে পাড়
তরণী কোথাও নেই আশেপাশে।
হঠাৎ করেই দেখতে পেল বৃদ্ধ এক মাঝি
বৈঠা বেয়ে ঢেউ এর সাথে চলছে নিরবধি
হাত জাগিয়ে ডাকলো বাবু,
শোনো হে মাঝি!
আমায় তুমি পাড় করে দাও যেতে হবে আজই।
বৃদ্ধ মাঝি ভিড়লো তীরে
‘কোথায় যাবেন বাবু?’
বাবু বলে, ওপার যাব।
পয়সা দেবো হইও নাকো কাবু।
খুশি মনে নৌকো চেপে উঠে বসলো বাবু
ভাবল বসে নদীর দৃশ্য দেখতে কত ভালো,
ঢেউয়ের আওয়াজ, খোলা আকাশ
বেলা গড়িয়ে কমে আসছে আলো।
হঠাৎ করে বাবু সাহেব বৃদ্ধকে ডেকে বলে,
‘বয়স তো বেশ হলো অনেক,
এভাবে কি আর চলে?’
বৃদ্ধ মাঝি মুচকি হেসে বলে, কোনরকম চলে বাবু
শরীরেও অসুখ, নৌকা বেয়ে চলছে যেমন
গরীবের কি আর সুখ!
‘ছেলে-মেয়ে আছে ক’টা?
জিজ্ঞেস করল বাবু।
এবার মাঝির অশ্রু এলো,
মুখটা হলো মলিন,
আমার ছেলে একটা আছে
অনেক বড় এখন,
খবর নেয় না বৃদ্ধ বাবা কোথায় আছে কেমন।
শোকে ওর মা মারা গেল! বলেছি আমি গিয়ে,
সময় পাইনি আসার মত বউ বাচ্চা নিয়ে।
বাবু এবার অবাক হয়ে এগিয়ে এসে বলে,
‘তা মাঝি থাকো কোথায়? ঘরে বাড়ি আছে?’
মাঝি হেসে বললো তবে,
ঘর দিয়ে কি হবে?
আমি একা বৃদ্ধ মানুষ নৌকা বেয়ে খাই
ঘরে আমার থাকবে কে বাবু এমন কেউ যে নাই।
বাবু বলে,
ঝড় বাদলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নাও তবে?
মাঝি বলে, ‘জীবন ঝড়ে ভাসি আমি
আর বা কিসের ঝড়!
ঝড়-বৃষ্টি লাগে না গায়ে আপন যখন পর।’