তোকে অনেকদিন দেখিনি !
অনেকদিন তোকে দেখিনি, অথচ রোজই তোর সাথে দেখা হয়, একেবারে একা, নিরাবরণ !
তবুও মনে হয় আমি অনেকদিন তোকে দেখিনি, তোকে এখন ঠিক চিনিনা,
তোর চোখের কোনে হালকা কালির দাগ, চোখের গভীরে ক্লান্তি
ঠোঁটের সেই ডোন্ট কেয়ার ভাবটা এখন বোধহয় খামোখা বিরক্ত কোরো না বলে,
কপালের দুপাশে রগ্ দুটো এখন তোর বয়স বলে দেয়, সাথে অনিবার্য ধৈর্যের ছদ্মবেশ ।
জিভ এখন অনেক আস্তে চলে, হাত আরো ধীরে, মাথা এখন মাথার জায়গায় বোধহয়।
তোকে অনেকদিন দেখিনি, অথচ রোজই তো দেখা হয়, কোনোদিনই জিজ্ঞেস করিনি ঠিক ঠিক,
এখনো কি কথায় কথায় জিভে, না হক মনে উঠে আসে অসহিষ্ণু গালাগালিগুলো,
নাকি মনের গভীরে ডুবে যায়, থিতিয়ে যায় সেগুলো, নিয়ন্ত্রিত মৃদ হাসির তলায়।
এখনো কি সুন্দর কিছু দেখলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকিস হাঁ করা বাচ্চার মতো
নাকি চোখ নামিয়ে নিস নিপাট ভদ্রলোকের মতো, সফল সর্বশিক্ষা অভিযান !
এখনো কি ভুল করিস বাচ্চার মতো, বাংলা স্কুলের বাচ্চার মতো জিভ কেটে বলিস,
যাকগে, মরুক যে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে একটা ভুল করলে,
এখনো কি, স্কুলের টিফিন রাস্তার কুকুর বাচ্চাদের খাইয়ে দিতে পারিস এক গাল হেসে,
এখনো কি ড্রেনে পড়ে যাওয়া বিড়াল বাচ্চাকে বুকের মধ্যে নিয়ে লুকিয়ে বিছানায় –
এখনো কি নিজের স্কুলের বই অন্য কাউকে দিয়ে বাবার ঠেঙানি খেতে পারিস হাসিমুখে ?
এখনো কি অন্যায় দেখলে শুকনো বারুদের মতো জ্বলে উঠতে পারিস,
চীৎকার করে বলে উঠতে পারিস, -শুয়োরের বাচ্চা, দুনিয়াটাকে বাপের জমিদারি পেয়েছো !
এখনো কি রাস্তার ধারে মৃতপ্রায় শালিকের ছানা দেখলে, ইন্টারভিউ বাদ দিয়ে
কোটপ্যান্ট পরেই বসে পড়তে পারিস রাস্তার ধুলোয়, ছলছল চোখে,
ছানাটার মুখে দু ফোঁটা জল দিয়ে বলে উঠতে পারিস – গঙ্গা গঙ্গা
এখনো কি শীতের রাতে অন্ধকার ফুটপাতে মরে কাঠ হয়ে যাওয়া ভিখারির দেহটা দুহাতে তুলে নিয়ে
বুকফাটা চীৎকার করে বলে উঠতে পারিস “হ্যালো, চার অক্ষরের বোকারা, কেউ কি কোথাও আছো ? হ্যালো ”
অনেকদিন দেখিনি, অথচ রোজই তোর সাথে দেখা হয়, আমি তোকে কোনোদিনই ঠিক ঠিক চিনিনা।