প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

বসে আছি আরামদায়ক কেদারাটির মাঝে,

সূর্যদেব অস্তাচলে,কর্মহীন সাঁঝে।

তালাবন্ধে কাটছে জীবনসবই কেমন রুক্ষ,

কোরোনামারী জীবাণু থেকে সুরক্ষাই লক্ষ্য।

অতীত আজও বর্তমানসোনালী প্রাণবন্ত,

কেমন কোরে কেটে গেলো ত্রিষষ্টি বসন্ত।

স্মৃতি অতি মধুর বটেকরি রোমন্থন,

সময় যন্ত্রে চড়ে পিছে তাকায় আমার মন।

আপনজনের কত কথাই তরঙ্গিত বুকে,

আজকে তাঁদের অনেকেরই বাস অন্যলোকে।

কোমল কঠোর বাবা মায়ের মুখটি মনে পড়ে,

সেই সাথে কত স্মৃতি হিয়ায় বেড়ায় ঘুরে।

পাঠশালে পড়ার সময় গল্পের বই হাতে,

শুকতারা সঙ্গে নিয়ে শুতে যেতেম রাতে।

আরো কতই পত্রিকা অমল মনকাড়া,

সবার সেরা ছিল মেলাআনন্দরস ভরা।

গ্রামোফোন বাজত তখনচলতো কেবল দমে,

থামল সে রেকর্ড প্লেয়ার এলপি ইপির ক্রমে।

তারপর টেপ রেকর্ডাররেকর্ড গেলেম ভুলে,

তাও আজ হারিয়ে গেছে বিষ্মৃতির ওই তলে।

গান শুনতে চলে যেতেম বঙ্গসংস্কৃতি,

একদিন হায় সহসা সে আনন্দেতেও ইতি।

উত্তম আর সুচিত্রা কি তুলসী থেকে ছবি,

স্বর্ণযুগের গানের কলি ভুলতে নারে কবি।

উনসত্তর সত্তরের অশান্ত সেই বঙ্গ,

রাজনীতি আর খুনোখুনির অহর্নিশই জঙ্গ।

কতই বা মোর বয়স তখনঅবাক করা দৃষ্টি,

কেমন করে ক্ষয়িষ্ণু হায় মোর বাংলার কৃষ্টি।

তার মাঝেই পুব বাংলার মুক্তিযুদ্ধ শুরু,

ভারতও যার পক্ষ নিলবক্ষ দুরুদুরু,

লক্ষ লক্ষ মানুষের হায় এই বাংলায় শরণ,

উল্টে গেল পাল্টে গেল জীবনযাপন ধরণ।

অন্ধকারের গল্প এবার লোডশেডিং খাওয়া,

এই আছে এই নেইবিজলী দেবী হাওয়া

ডুমুরের ফুল যেন ঠিকমিলত দেখা কম,

গ্রীষ্মকালে রাতের বেলায় বেরিয়ে যেত দম।

বামপন্থার রাজনীতিপ্রমোদ থেকে জ্যোতি,

অবস্থাটা খুব জরুরীইন্দিরা রাজ ইতি

সেকালের জনতা দলআজ জনতা ভারতীয়,

ঠিক যেমন রিলায়েন্সনতুন নামে জিও।

ইন্দিরার হত্যা ছিল ব্লুস্টারেরই ফল,

রাজীবতাঁর অকাল প্রয়াণরাজনৈতিক ছল।

সোভিয়েতের ভাঙাগড়ায় ইউনিয়নের অন্ত,

বার্লিনের পাঁচিল ভেঙে জার্মানী প্রাণবন্ত।

বলনাচ টুইস্ট শেষে ডিস্কো গেল জমে,

এবার এল বোকা বাক্স দূরদর্শন নামে।

অমিতাভ আর আমজাদের টক্করের শোলে,

সত্যজিতের গুগাবাবা ফেলেছিলেম গিলে।

কমল অজয় পুষ্পেনের টেস্ট ক্রিকেটের গল্প,

মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল এখনও অল্প স্বল্প।

কপিল দেবের বিশ্ববিজয় ভারত হল সেরা,

মারাদোনার পায়ের যাদু স্মৃতির প্রাকার ঘেরা।

জীবনমুখী গান যেন ঠিক জীবনটুকু ছাড়া,

যে ছেলে তার বেণী দোলেবাংলা ব্যাণ্ডে সেরা।

এমন কত ইতিবৃত্ত মনের পাতায় লেখা,

দুর্গার সেই রেলগাড়ির পাতালমাঝে দেখা।

দোতলা বাসের ওপরতলা কিম্বা ট্রাম গাড়ী,

আসন যদি পেয়ে যেতেম সবার আগের সারি,

মনে হত আমি যেন সেই সময়ের রাজা,

ফুরফুরে বাতাস মেখে শরীর মন তাজা।

কিন্তু হায় সে সুখও মিলিয়ে গেল শেষে,

মিনি বাসে চড়তে হত ভিড়ের মাঝে ঠেসে।

এমন করেই মিশল জীবন নব্য যুগের ভীড়ে,

পুরাতন যা উড়ে গেল বিশ্বায়নের ঝড়ে।

জাবদা খাতার সঙ্গে লুপ্ত বিশাল গণক যন্ত্র,

কম্পিউটার নতুন দিশায় কর্মের বীজ মন্ত্র।

পিসি এখন কোলে চড়েনামটি ল্যাপ টপ,

কিছুদিনের জন্য হলেও পেজার কিন্তু ফ্লপ।

সবার হাতেই সেলফোনবুড়ো বুড়িও স্মার্ট,

ফেসবুক,হোয়াট্সঅ্যাপ আর ইন্টারনেটে ফ্লার্ট।

মলের সাথে মাল্টিপ্লেক্সঅনলাইনেও শপিং,

ছুটির দিনে সকাল সন্ধ্যে রেস্টুরেন্টে পিপিং।

সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে বিশাল হেস্তনেস্ত,

বিমান চড়ে বুদ্ধবাবুর এবার বাণপ্রস্থ।

মাটির ধুলো মাথায় নিয়ে মা মানুষের সুখে,

এলেন দিদি অগ্নিকন্যা আগুন দিলেন রুখে।

তিনযুগের লাল পতাকার নিভল শেষে জ্যোতি,

তৃণমূলের হরিৎক্ষেত্রে মমতা দিদির দ্যুতি।

নবান্নেতে অন্নকূট আজ রাইটার্স তাই কাঁদে,

জনগণ জড়িয়ে গেছে রাজনীতির ফাঁদে।

দিদি আমাদের চিত্রকর কাব্যটাও আসে,

সাদা শাড়ী হাওয়াই চটি ছোটেন অনায়াসে।

রাহুল গান্ধী মোদীর চালে একেবারেই মাত,

ভাজপাতে দিন এখন কংগ্রেসেতে রাত।

দিল্লীতে দাদা মোদীর মনে মনে কথা,

সুদ কমছে, দাম বাড়ছে আমজনতার ব্যাথা।

আই পি এল আই এস এলেই এখন জবর নেশা,

মদের মাঝে মানুষ আজ খোঁজে বাঁচার দিশা।

ওলা উবের এসি বাসে হলুদ ট্যাক্সি কম,

দেশ বিদেশে বাবু বিবির বেড়ানো হরদম।

প্রমোটার ফ্ল্যাট কালচার সঙ্গে কেবলটিভি,

বোকা বাক্সের ধারাবাহিকে শয়তানির ছবি।

এমন কতই বিবর্তনের সাক্ষী স্বয়ং আমি,

বিশ্ব ঊষ্ণায়নের তাপে শীতের দিনেও ঘামি।

আয়লা,ফণী,বুলবুল আর সুপার সাইক্লোন,

ধ্বস্ত কোরে রিক্ত কোরে দিল আমার মন।

ভূমিকম্প, সুনামী আর জঙ্গীহানার ক্ষতি,

আজও বুঝি মনের মাঝে উথালপাথাল ভীতি।

ভূপাল স্মৃতি উসকে দিল ভাইজ্যাগ গ্যাসকাণ্ড,

বিশবিশের বিষের জ্বালায় বিশ্ব লণ্ডভণ্ড।

সচল ধরা অচল এখন ভয়ানক এক ত্রাসে,

মনুষ্যকুল করে হাঁসফাঁস অক্টোপাসের ফাঁসে।

পৃথিবী এক নীরস গদ্যহারিয়ে গেছে ছন্দ,

বাংলা বন্ধ্,ভারত বন্ধ্,আজ বিশ্বদুয়ারও বন্ধ।

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘাউমফুন আমফান,

ভয়ঙ্কর সে ঝড়ের মাতনওষ্ঠাগত প্রাণ।

আরো কতই দেখতে হবে থাকলে আমার আয়ু,

অভিজ্ঞতা বেশ রোমাঞ্চকরকি বলেন শ্রীজটায়ু !

————————————————————-

                       স্বপন চক্রবর্তী

0

Publication author

1
একটি বহুজাতিক সংস্থায় প্রবন্ধক পদে কর্মরত ছিলাম। ২০১৭ সালে ৬০ বছর বয়সে অবসর নিয়েছি । এখন কবিতা ও গল্প লেখা আমার অবসরের সাথী।
Comments: 0Publics: 25Registration: 26-08-2020
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।