অমলবাবুর মুখোশ
মানুষ মানবিক হয়নি কোনোকালে
যুগ যুগ মানুষ শুধু মুখোশ পরেছে
আজীবন জীবনে বহু ঠকে বহু ভেবে তাই আজ
সারা বাজার আতিপাতি খুঁজে অমলবাবু নিজের জন্য
একটা মানুষের মুখোশ কিনেছে।
জগতের সেই শেষ কথা যা সে বোঝেনি আগে এতদিন
আজ সে বোঝেছে- জগৎ দিয়েছে যা জাগতিক ঋণ
আমরা না কারোর আপন,না কারোর পর–
শুধু আমরা যারা মানুষেরা তারা
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন রঙে
বিভিন্ন ঢঙে বিভিন্ন রকম স্বার্থপর।
হয়তো পৃথিবীটা ততটা সাজানো গোছানো নয়
যতটা সাজানো গোছানো আমরা সবাই চেয়েছিলাম
পৃথিবীটা সেদিনই তো আজকের এমনি এলোমেলো অগোছালো একদিন হবেই হবে জেনেছিলাম,যেদিন
আজের ওই অমলবাবুর চেয়েও হাজারো বাবুর আগে
হয়তো তুমি আমি দুজনাতে মুখোশ কিনেছিলাম
হয়তো কয়েকশ হাজার বছর আগে।
হয়তো সেই থেকে তুমি আমি আসছি,যাচ্ছি –
সেই একই মুখোশ রাখছি,খুলছি, পরছি;
কখনো জীবন হতে বহু দূরে তো, কখনো জীবনের কাছাকাছি —
আমরা যুগ যুগ জন্মান্তরজুড়ে মুখোশ পরছি।
আজ হঠাৎ বাতাস একটু বদলেছে প্রতি যুগে যেমন বদলায়,
আজ সত্যের ধরন একটু বদলেছে,যেভাবে সত্য সৌন্দর্য হারায়
তার একটু একটু করে– শুনলে শুনতে পাবে অরণ্যের ভাষায়
পাখি পাখিকে ডেকে বলছে সমস্বরে;গাছ,পশু সবাই শুনছে–
যুগ যুগ বোকা ছিল যারা,তারা হঠাৎ চালাক বনেছে।
কে বানিয়েছিল ওই মুখোশ প্রথম, ও সব আর ভেবে কি
রাতের আঁধারে রাতকে ভিজিয়ে উড়ে যে রাতের জোনাকি
হয়তো ওরাই জানে কে বানিয়েছিল,
আর কে পরেছিল মুখোশ প্রথম,
আজ তো সবাই মুখোশধারী,সবাই –
কেউ একটু বেশি ,কেউ একটু কম।
আকাশজুড়ে বৃষ্টি নেমেছে শ্রাবণমাসে,কেউ আর ভিজতে
বাকি নেই;রাত্রি নেমেছে বিশ্বজুড়ে,না,কেউ আর আলোতে
মজে নেই – আজ বিশ্বায়নের বিশ্বছবি তার নতুন সংকেতে
মুখোশ পরিয়েছে,আর সরিয়েছে মানুষকে তার মানবজাতি হতে।
শুধু ওই অমলবাবুটাই মুখোশ পরতে বাকি ছিল
জীবনে প্রতি পদে প্রতি ক্ষণে বোকার মতো হোঁচট খাচ্ছিল।
শেষে সেও কিনে নিল বাজারে মানুষের মুখোশ একটা,
পৃথিবী আর বোধ হয় পাবে না ফিরে তার হারানো সৌন্দর্যটা।
মানুষ মুখোশ পরেছে যুগ যুগ,মানুষ গড়েছে যুগ;
পশুরা,পাখিরা পরেনি মুখোশ কখনো,কোনো হুজুগ
কখনো আসেনি বনে যে বাঘ হরিণ আর খাবে না কোনোদিন,
না হয়েছে বলা কখনো গাইবে না গান পাখি গাইবার দিন।
অমলবাবু কিনেছে সবে তো একটা মুখোশ,
আমরা কিনেছি বহু,বহু রকমের।
অমলবাবুও বুঝবে শীঘ্র হবে না কাজ ওই একটা মুখোশে,
পৃথিবী নিজের তৈরি গোলকধাঁধায় নিজেই পথ হারাবে দিনশেষে।
তখন শুধু রাত আর গভীর রাতের আঁধার,
বেরোবার কোনো পথ,কোনো দিশা তখন নেই
যতই যত রকমের যত রঙের মুখোশের পর মুখোশ
কিনুক অমলবাবু
অমলবাবুও একদিন পাবে না খুঁজে পথ বা পথের দিশা
আমাদেরই মতো দিগভ্রান্ত উন্মাদ হয়ে ওই একই রাতের
আঁধারে হারিয়ে যাবে সেও জটিল এই বিষবৃক্ষ-পৃথিবীর
দুঃস্বপ্ন -জোড়া, মৃত্যু-মোড়া গোলকধাঁধাতেই।
একদম বিলুপ্তির কিনারে ওই রাতে চলে আসবো আমরা,
সে বিলুপ্তির রাতে কেউ বুঝবে না কারোর দেওয়া বাঁচার
পথের কোনো হদিস বা ইশারা।
একসাথে সবাই বোকা,সবাই বধির,সবাই অন্ধ
গন্ধ-স্পর্শ-রূপ-রসহীন,
আমাদের যাপিত বিগত দিনগুলোতে জীবনের মূল নীতির প্রতি
রয়ে যাবে অশোধিত অস্পষ্ট অস্ফূট অলিখিত অনাদায়ী ঋণ।