আনন্দ
আমার বাবার নাম আনন্দ
ছিল বলছি না কারণ সন্তানের কাছে
বাবা কখনো অতীত হয়ে যেতে পারেন না
আমাকে বাবার মতো দেখতে
কবিতার প্রতি টানও পুরোটাই
তাঁর থেকে পাওয়া।
কাছের লোকেরা বলে, তাঁর রাগ এবং খামখেয়ালিপনাও
আমি অনেকটা পেয়েছি,
একটু অন্যরকম মানুষ ছিলেন।
বাবা টাকাপয়সা কম গুছোতেন
কিন্তু বড় মেয়ের কবিতা গুছিয়ে রাখতেন।
সেই মেয়ে এখন আপাত স্থির এক ভদ্রমহিলা,
বল্লমপাড়ার রোদচাটা, ফাটা ফ্ল্যাটে
জ্যোৎস্না সামলায়,
আলো আর হাওয়ার সাথে আলাপ চালায় অবাধে
সেই কথোপকথন যথাসাধ্য কাগজে ভরতে ভরতেই তার ভোর থেকে রাত হয়ে যায়
সাত-আট কাপ কড়া কফি আর সস্তার বিস্কুটে
দৈনিক ব্যর্থতা উদযাপন করে।
কবিতা লেখে সে
লিখতে লিখতে কখনো চোখের জলে
কখনো জ্যোৎস্নায় তার
কাব্যের প্যাপিরাস ভিজে যায়।
বাবা অনেক সময়ে বকাবকি করতেন কারণ ছাড়াই
এত সিগারেট খেতেন যে বিছানার চাদর
থেকে সোফা এমন কী বেচারা খবরের কাগজটা থেকেও তামাকের গন্ধ বেরোত।
বাবার নিজস্ব ঘ্রাণ পেতে আমি এখন নিজেকে পোড়াই কিন্তু একটুও পাই না।
আনন্দের মোহন শরীর নেই আর
তবুও জগৎব্যাপী বহমান আনন্দের তরঙ্গ থেকে
এখনো তাঁর আভাস পাই।
প্রায়ই আমার কবিতায় তাঁর উদার ছায়া পড়ে
আর সমস্ত অভাব ভুলে
আমি পরের পংক্তিতে পৌঁছে যাই।
সামনের জন্মেও সমস্ত অর্থে
আনন্দের ঔরস থেকে জন্মাতে চাই আমি,
আবারো কবিতা পড়ব তাঁর পাশে বসে
জন্মান্তরের ছড়ানো ছিটনো বারান্দায়।