প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

দুটি ভাত দেবেচারদিন ধরে পড়েনি কিছুই পেটে,”

মা বলে আমারে – “খাবার সময় কে এল দুয়ারে বটে।

উঁকি দিয়ে দেখি দুয়ারে দাঁড়ায়ে দুখিনী রমণী এক,

ছিন্ন বস্ত্র, শীর্ণ চেহারাবুঝলাম নহে ভেক।

ছোট ছোট তিন শিশু তার সাথেঅপর একটি কোলে,

কেমন করে বলি আমি তারে – “যাও এইক্ষণে চলে ! ”

অর্গল খুলিবলি দুখিনীরে – “দিদি গো ভিতরে এসো,

তোমাদের তরে প্রস্তুত আজি অন্নএকটু বসো।

ক্ষুধার জ্বালায় চারদিন ধরে শিশুগুলি কাঁদে পথে,

যেখানেই যাইকরে দূর দূরদেয় না কিছুই হাতে

মা হয়ে আমি কেমন করে গো দেখি শিশুদের কষ্ট,”

অশ্রুরধারায় যায় ভেসে নারী – “হায় মোর অদৃষ্ট।

পূজার সময় কত ধূমধাম শহরের চারিদিকে,

নতুন পোশাক সবার পরণেকে হায় মোরে দেখে।

আমার কথা নয় দিনু ছেড়ে”-কহে সে শীর্ণকায়া,

কি দোষ হায় এই শিশুদেরহয় না কি কারো মায়া !”

শুধাই রমারে – “সিঁথিতে সিঁদুর,হাতেও রয়েছে শাঁখা,

কি করেন দিদি স্বামীটি তোমারপাও না কি তার দেখা !”

রমণী রূপসী নিঃসন্দেহেতবে দরদীয়া বনমালী,

দীনতা আড়ালে লুকায়ে রেখেছে অমল রূপের ডালী।

নচেৎ ধরার শতেক অসুর ঝাঁপাত নারীর ঘাড়ে,”

হঠাৎ দিদির সুরেলা কণ্ঠে চিন্তায় ছেদ পড়ে।

সে নেশাখোরগাঁজা ভাঙ খেয়ে পড়ে থাকে ইতিউতি,

তার জন্যেই আমার আজ হায় এত দুর্গতি।

তবে মন্দ হলেও সে ভোলানাথমোরে খুব ভালবাসে,

গালমন্দ করি তারে খুবইসে দেখি শুধুই হাসে।

কোথায় বাড়ী মা তোমাদের শুনিএলে গো কেমন করে !”

দূর আছে বটেএসেছি হেথায় অনেক জায়গা ঘুরে।

অত কথা কেন শুধাও গো বাপুদেবে কি দুমুঠো খেতে !

সাফ কথা বলোঘোরপ্যাঁচ কেনবেরোই আবার পথে।

না না বাছা শোনএসেছই যবে এই গরীবের ঘরে,

খেয়ে যাও দুটি” – পিছনে তাকাই মায়ের কণ্ঠস্বরে।

কখন মা যে এসেছে পিছনে বুঝতে পারিনি মোটে,

অভুক্ত কেন রবে মা আজকে যদি আমাদেরও জোটে।

আজ বিজয়ার বিষাদ লগ্নে সঞ্চয় করি পুণ্য,

বসে পড়ি চল সব একসাথেপ্রস্তুত পরমান্ন।

চেটেপুটে খেল দুখিনী রমণী আর তার শিশুগুলি,

তাদের মুখের অনাবিল হাসিকেমন করে তা ভুলি !

যাবার সময়ে দুখিনীর হাতে তুলে দিনু কিছু অর্থ,

ভাবলাম আজি দিনটা মোদের হয়নি মোটেই ব্যর্থ।

শিশুদের তরে পোশাক আর তোমার জন্য শাড়ী,

কিনে নিও দিদিমোরা খুবই দীনআর কিছু দিতে নারি।

দিদির আননে খুশীর ঝলকআমরাও সুখী অতি,

মনে হল যেন মোদের আঙনে স্বয়ং দাঁড়ায়ে সতী।

রাতের বেলায় আঁধার ঘরেতে হঠাৎ আলোক রাশি ,

জগত জননী দাঁড়ায়ে সমুখেনয়নে মধুর হাসি,

কহিলেন তিনি – “ঠিকই ভেবেছিলিআমিই পার্বতী,

এসেছিনু আজি তোদের কুটীরে সাথে লয়ে সন্ততি।

তোদের সেবায় পরম তৃপ্তরবে না অর্থকষ্ট,

হৃদয় মাঝারে যে রাখে আমারেতার প্রতি আমি তুষ্ট।

আর যারা করে আর্তের সেবা তারা পূজে ঈশ্বরে,

তাই এসেছিনু দুখিনীর বেশে আজকে তোদের ঘরে।

মা দশভুজা অন্তর্হিতানিদ্রা গিয়াছে টুটে,

যা দেখলামসব কি সত্যনাকি সে স্বপ্ন বটে !

কত বছরের পুরানো ঘটনাআজো জাগে শিহরণ,

দুখিনীর বেশে দেবী দর্শনকাঁপে যেন তনুমন।

ভাবছ বুঝি বা কল্পকাহিনীসত্যতা নেই মোটে,

আমার সঙ্গে আলাপ সবার কম দিন নয় বটে।

এমন ঘটনা আমার জীবনেনিশ্চিত হতো জানা,

সত্য মিথ্যা সে যাই ভাবোআমার কিসের মানা !

তবে এই কথাটুকু বলতেই পারিঅনুভূতি মোর স্পষ্ট,

অর্থগরিমা বাগাড়ম্বরে জননী আজিকে রুষ্ট।

ভক্তি কোথায়যেথা হেরি হায় জমকের বাড়াবাড়ি,

অনাচার তথা ব্যাভিচার বুঝি ঘোরে হাতে হাত ধরি

তাই পরিণামে পৃথ্বীর লয়চৌদিকে হাহাকার,

রসাতলে বুঝি নিমজ্জমান ধরণীর সংসার।

আহ্বান করি হয়োনাকো কেহ বিস্মৃত এইক্ষণে,

জননী সতত নিবাস করেন অনাথ আতুর সনে।

তাদেরকে যদি ঘৃণা করো সবেকরো সদা অবহেলা,

তবে জেনো দেবী রবেন কেবলই কিছুটা মাটির ডেলা।

মৃণ্ময়ী মাকে যদি সত্যই মাগ চিন্ময়ী রূপে,

মানুষের সেবা কর মহাজন নিরহংকারী রূপে।

 

শিবের বণিতা জননী  শিবাণী ভগবতী পার্বতী,

ক্ষমা করো মাগোসন্তান তবওগো অমৃতজ্যোতি।

——————————————————————-

0

Publication author

1
একটি বহুজাতিক সংস্থায় প্রবন্ধক পদে কর্মরত ছিলাম। ২০১৭ সালে ৬০ বছর বয়সে অবসর নিয়েছি । এখন কবিতা ও গল্প লেখা আমার অবসরের সাথী।
Comments: 0Publics: 25Registration: 26-08-2020
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

আপনি কি গল্প পড়তে ও লিখতে ভালোবাসেন? তবে বাংলা গল্প এবং অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজ‌ই যুক্ত হন আমাদের নতুন গল্পের সাইটে