একশো একুশ বছর আগে এসেছিলে (কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লিখা) ৷

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

বিট্রিশরা অমানুষ হলেও ভিতরে মনুষ্যত্ব ছিলো
বিদ্রোহী কবিতার জন্য ফাঁসি দেয়নি তোমাকে।
তুমি যদি আজকের কবি হতে, বিদ্রোহী লিখতে
নির্ঘাত তোমাকে ফাঁসিতে চড়িয়ে দেশদ্রোহী বলতো।
শতশত ইসলামি সংগীতের জন্য মৌলবাদী
বছরের পর বছর বন্দীশালায় কাটাতে হতো।
ভালো হ’য়েছে তুমি একশো একুশ বছর আগে এসে
বিশ্ব কাঁপায়ে ধূমকেতুর মতো নীরবে চলে গেলে।
বাংলার বুকে এ-তো অনিয়ম, নিপীড়ন, নির্যাতন
ক্ষমতার গদি পাকাপোক্ত করতে পিলখানার বর্বরতা
তুমি নীরবে হজম করতে পারতে না, যা আমরা করছি
কলমের কালিতে শব্দেরা ঝরে পড়তো কাগজের পাতায়
বাঁকা বাঁশের বাঁশরীতে সুর উঠতো বিদ্রোহের।
তোমার বিরুদ্ধে শতশত অভিযোগ আনা হতো
তুমি তো থাকতে সত্যের পূজারী, তোমার জোর থাকতো হৃদয়ে
আর তাদের থাকতো টাকা, ক্ষমতা আর বাহিনীর।
তুমি আমার হৃদয়ের কবি, চেতনা, হৃদয়ের নির্যাস
তোমার সৃষ্ট পথে আমি হাঁটি তব সৃষ্টি বক্ষে ল’য়ে।

আজ তুমি বেঁচে থাকলে স্বচক্ষে দ্যাখতে পেতে হাজারো অনিয়মের প্যাঁচে আঁটকে থাকা দেশ
দূর্ণীতি কিভাবে আঁকড়ে ধরেছে জাতির মেরুদণ্ড।
রাজনীতি, সামাজিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড নড়বড়ে
গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে বল্গাহীন লুন্ঠন।
বাড়ছে বৈষম্য,সামাজিক অস্থিরতা,দলীয় কোন্দল
কৌশলে চাপিয়ে দেয়া আধিপত্যবাদী অর্থনীতি।
সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারের গুলিতে এপারের মানুষ হত্যা
নদ-নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে পানি আগ্রাসন
অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে জাতীয় চেতনা,
মূল্যবোধকে বন্ধ্যাত্বের দিকে ঠেলে দেয়া, এ ছিলোনা তোমার সময়।

তুমি ঔপনিবেশিক শাসকের কারাগারে বসেও শিকল ভাঙার গান গেয়েছিলে
তুমি এসেছিলে মুক্তির আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে।
তুমি ছিলে বিদ্রোহী বীর, উন্নত ছিলো তোমার শির
তুমি উঠিয়াছিলে ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন “আরশ” ছেদিয়া।
যদি তোমার কণ্ঠে আজ ধ্বনিত হতো
“আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন”
কি হাল হতো তোমার?
নির্ঘাত ঝুলতে ফাঁসির কাস্টে।

হে দ্রোহের কবি, তুমি আজ অবহেলিত
আমরা একশো একুশ বছরেও তোমাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারিনি
তোমাকে নিয়ে ব্যবসার সওদা করতে শিখেছি।
আমরা খন্ড নজরুলকে চিনি, এখনো পূর্ণাঙ্গ নজরুলকে চিনতে পারিনি
আমরা বিদ্রোহী নজরুলকে চিনি, অসাম্প্রদায়িক নজরুলকে চিনতে পারিনি।
এদেশে নজরুল চেয়ার আছে, আছে নজরুল অধ্যাপক
কিন্তু এদেশে নজরুল পড়ানো হয়না, চর্চা হয়না।

সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার অবক্ষয়ের চোরাবালি
মূল্যবোধের খরায় তোমার চর্চা মোদের মুক্তির পাথেয়।
জাতীয় সম্পদের মতো তুমিও আজ
আত্মঘাতী, আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের শিকার
যাঁরা তোমার মতো মানবতাবাদী কবিকে মূল্যায়ন করতে পারেনি, তোমাকে ধারণ করতে পারেনি হৃদয়ে, আমি জানাই তাদের ধিক্কার।

বিট্রিশরা অমানুষ হলেও ভিতরে মনুষ্যত্ব ছিলো
তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো।
আজ তুমি বাঙ্গালির রোষানল থেকে বাঁচতে পারতে না
কোনভাবেই রক্ষা করতে পারতে না নিজেকে।
তোমার হৃদয় কখনো হজম করতে পারতো না
ক্ষুধার জ্বালায় মানুষের আত্মহত্যা
চাকুরী না পাওয়া বেকার যুবকের ট্রেনের নীচে ঝাপ
সহ্য করতে পারতে না ধর্ষিতা শিশু, কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা নারীর নীরব কান্না
তুমি বিদ্রোহ করতেই, কলমের কালিতে ঝরাতেই
বলিষ্ঠ কণ্ঠে গেয়ে উঠতে তুমি —
“মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
                  আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না –
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না
                           বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
                       আমি সেই দিন হব শান্ত”।
  
আমি চির-বিদ্রোহী বীর –
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
তুমি চির-বিদ্রোহী বীর, পরম সুভাগ্য তোমার
একশো একুশ বছর আগে এসেছিলে
এখন হলে ফাঁসির রশিতে ঝুলতো চির উন্নত শির।

১৪/০৫/২০২২ সৌদি আরব

0

Publication author

0
মোঃ আকাইদ-উল-ইসলাম (মিটু সর্দার)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বড়মুড়া গ্রামে ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর, এক সম্ভান্ত্রশালী মুসলিম পরিবারে কবির জন্ম। কবির পিতার নাম নূরুল ইসলাম (মাষ্টার) আর পিতামহের নাম আলতাব আলী সর্দার
Comments: 0Publics: 150Registration: 02-04-2022
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।