নয়নপুরে ঠিকানা বদল
ট্রেনের চাকায়, আটকে আছে,
ছোট্ট একটা, স্বপ্নমাখা।
হকারি পেশা, লোকাল ট্রেনে,
‘হকার’, নামে বেঁচে থাকা।
ঐ যে দেখছো, স্টেশন ধারে,
‘বাতাসি’ গ্রাম, সবুজে ঘেরা।
ঠিকানা লেখা, ছোট্ট ঘরে,
অভাব নিয়ে, বাসটি করা।
বাদাম ভাজা, নেবেন দাদা,
দাম নয়তো, খুব যে বেশী,
মুখে দিলে, দেদার মজা,
ভালোবাসে, খোকা, খুকী।
এই যে দিদি, ভাবছেন কি?
নিয়ে যাননা, দুহাত ভরে,
বাদাম ভাজা, ঠোঙা ভর্তি,
খেলে পরে, মজা পাবে।
এ কামরা, ও কামরা,
সকাল থেকে, রাত গড়িয়ে,
লোকাল ট্রেনে, দশটা-আটটা,
বাদাম বেচা, টাকার জন্যে।
ক্লান্ত শরীর, ক্লান্ত মনে,
পৌঁছতে চায়, দিনের শেষে,
পথটা চেয়ে, বসে আছে,
অভাবী চোখ, তার সংসারে।
স্বপ্নখানি টেনে আনে,
ঘরের মধ্যে, চার দেওয়ালে,
বাতাসি গ্রাম, ঠিকানা, না হয়ে,
হত যদি, কলকাতাতে!
উঁচু একটা, ফ্ল্যাটের মধ্যে,
জীবনের স্বাদ, ঝাঁ চকচকে।
স্বপ্ন যত রঙীন হয়ে,
জীবন যেত, কত পাল্টে।
শুয়ে, শুয়ে কত সময়,
স্বপ্নগুলো, দিব্যি ভাবায়।
দশটা-পাঁচটা, অফিস হত,
মাইনে পেত, মাসের প্রথম।
মেট্রো রেল, চিড়িয়াখানা,
বাদাম নয়, হ্যাম বার্গার,
ঘুরে বেড়ানো, সিনেমা দেখা,
আয়রে ঘুম, চোখের পাতায়।
জীবনটা, তার গড়িয়ে, গড়িয়ে,
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যে, রাতে,
বাদাম ভাজা, বেচতে, বেচতে,
স্বপ্নরা যায়, স্টেশন ছেড়ে।
এমনি করে, চলতে গিয়ে,
হঠাৎ হল,ছন্দপতন,
দুষ্টু রাবন, ছলে, বলে,
তার প্রিয়াকে, করল হরন।
বাতাসি গ্রাম একই আছে,
ছবির ফ্রেমে, আগের মত,
নিয়ম করে, লোকাল ট্রেনে,
বাড়ি ফিরত, অন্যরা সব।
বাদাম বেচা, থাকল পড়ে,
হকারিকেও, ছুটি দিয়ে,
থাকল শুয়ে, স্বপ্ন নিয়ে,
চাকার তলায়, দুভাগ হয়ে।
বাদাম ভাজা, যান না নিয়ে,
সুর তোলে কেউ, অন্য গলায়,
বাতাসি গ্রামের পরিবর্তে,
‘নয়নপুরে’, ঠিকানা বদল!
(কয়েক বছর আগে সংবাদপত্রে, প্রকাশিত, এইরকম একটি খবর মনকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিল।)