না ফেরার চিঠি
জীবনের এক চতুর্থাংশেরও অধিক সময় পার করলাম। এই সামান্য কয়টা দিনে বুঝতে পারলাম, জীবন সবার জন্য এক নয়।
দারিদ্র্যতা, দুঃখ, কষ্ট, লাঞ্চনা আর সমাজের কিছু জনহিতৈষী, যারা আর্তচিৎকারে কানে তুলো দিয়ে রাখে, তাদের সংস্পর্শে বেড়ে উঠলাম।
দারিদ্র্যের ভূষনে মা যখন একবেলা খাবার জোগাড়ে ছুটাছুটি করতেন, মা-কে তখন স্বর্গ মনে হত।
কিন্তু, ধুর্ত নেতা পূর্তমন্ত্রী হওয়ার জন্য সমাজে যারা স্লোগান দিত তারা কেউ একমুঠো চাল দেয় নি।
অনেক কষ্টে প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হলাম, উচ্চ মাধ্যমিকে এসে নিজের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো একটা রেজাল্ট করলাম।
কিন্তু না, বুঝতে পারলাম এই দেশে, এই সমাজে দুই টাকার একটি নোট আর একটি সার্টিফিকেটের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।
অন্যরার মতো যারা তেল সরবরাহে আরব দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে তাদের মতো আমি জায়গায় জায়গায় তেল সরবরাহ করতে পারব না।
আমি জালিয়াত হতে পারব না। আমার বাবা যে সৎ ছিলেন।
প্রকৃতির কৃত্রিম লীলা আমাকে গ্রাস করল, কিন্তু সমাজ, এই দেশ আমাকে কিছু দেয়নি।
যাদের ঘর নেই কিন্তু ঘর বানায়, জমি নেই কিন্তু জমিতে কাজ করে, যারা কখনো আনন্দকে স্পর্শ করেনি, যারা খেটে খায়, যারা কখনো সুউচ্চ নিরাশক্ত পর্বতমালা দেখতে যায়নি, যারা সমুদ্রের বিশালতা উপভোগ করতে পারেনি, নিঃস্ব, সম্বলহীন, অজ্ঞানী, মূর্খ- আমি তাদেরই একজন হয়ে এই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি দূরে, বহুদূরে, ভালো থাকুক এই সমাজ, এই দেশ।