প্রবাসী (চার)

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

পথেঘাটে যখন নাগাল পাইতো দালাল
বলতো আমায় “বিদেশ যাইবি?
করতে পারবি অনেক কামাই
থাকতে হবেনা সেজে নিমাই।

টানাপোড়েনের সংসারে হাসবে সুখের হাসি
কাইটা যাইবো দারিদ্র্যতার অভিশাপের রাত্রি
ক্ষেতখামারে কামলার কাছে কে দিবে পাত্রী
বিছানায় শুয়ে আমি ভাবি সারা রাত্রি।

বিদেশ গেলে টাকা পামু
ছোট্ট ভাই-বোনকে করামু পড়ালেখা
মানুষের মতো মানুষ হইবো
কুঁড়ে ঘরে বিল্ডিং উঠবো।

দালাল আমারে কইছিলো, কাম বেশি কঠিন-না
অফিসের ভিতরে চা, ঘাওয়া বানানো
রাজি হ’য়ে পাসপোর্ট দিয়ে দিলাম
সঙ্গে দিলাম জমি বিক্রির লাখ টাকা
খুশিতে আমি আত্মহারা ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা।

কিছুদিন যেতে না যেতেই ব’লে দালাল
ভালো ভিসা পেয়েছি খোলে যাবে তোর কপাল
লাগবে টাকা আরো লাখ –
এক ভিসার পিছে অনেক মানুষের ঝাঁক।

লাভের উপর এনে দিলাম আরো লাখ
রাতে ঘুমালে শুনতে পাই সৌদি টাকার হাঁক
সপ্তাহ খানেক পর, -ব’লে এসে মেডিক্যালে চল
বিশ হাজার টাকা দিলাম গুনে –
কি যেন আসে রিপোর্ট আল্লা-আল্লা বলি মনে।

মেডিক্যালের খবর হুইন্না, স্বপ্ন দিলাম বুইন্না
দিন যায় বিদেশের আশে, রাত যায় দীর্ঘতম শ্বাসে।
মাস খানেক পর দালাল কয় লাগছে তোর ভিসা
জলদি জমা করো পাঁচ লাখ পয়সা।

সুদিবাট্টা কইরা, টাইন্যা টুইন্যা আইন্যা দিলাম পয়সা
টিকেট কেটে খবর দিবো থাকো ঘরে বইস্যা।
কেটে যায় কয়েক মাস, বাড়ে দীর্ঘশ্বাস
দালাল কয় আজ না কাল
এইভাবে চলে দাবা খেলার চাল।
দাবা খেলায় গেলাম ফেঁসে
বুক ফেটে কান্না আসে
তাগাদা আসে সুদের লাভের।

হঠাৎ একদিন কাক ডাকা স্নিগ্ধ ভোরে
পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট হাতে দিয়ে ব’লে
” যা-ও স্বপ্ন পূরনের তরে, বিমানে উড়ে”।
সোনার হরিণ পেলাম বহু মাস ঘুরতে ঘুরতে –
অবশেষে আইলাম বিমানে উড়তে উড়তে
চারদিকে খালি মরুভূমি আর মরুভূমি
দ্যাখিনা কেবল মানবের বিচরণ ভূমি।

কথা ছিলো ভিসা দিবো অফিসে চা কিংবা ঘাওয়া বানানোর
আইস্যা দ্যাখি কি –
মরুভূমির মাঝখানে দিছে উটের রাখালি।
উপরে আকাশ নীচে বালি
মাঝখানে রৌদ্রের তাপে জীবন হই ছালি।
বেতন দিবো আটশো রিয়াল
রাখতে হবে উটের খেয়াল
কলিজা ফাইট্টা কান্দন আসে
এ-তো টাকা ঋণ শুধিব কিসে
মরতে হবে বুঝি বিষক্রিয়ার বিষে।

আদম ব্যাপারির মিষ্টি কথায় গলতে দিও না মন
টাকার তরে বিক্রি করতে পারে নাড়িছেঁড়া ধন।
কথা কাজে থাকেনা মিল, মিথ্যে পেটে করে কিলবিল
মৃত্যুর পর কপোলে থাকে যেন দালাল নামক সীল।

২৯/০৭/২০২২ সৌদি আরব

0

Publication author

0
মোঃ আকাইদ-উল-ইসলাম (মিটু সর্দার)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বড়মুড়া গ্রামে ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর, এক সম্ভান্ত্রশালী মুসলিম পরিবারে কবির জন্ম। কবির পিতার নাম নূরুল ইসলাম (মাষ্টার) আর পিতামহের নাম আলতাব আলী সর্দার
Comments: 0Publics: 150Registration: 02-04-2022
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।