মহিষমর্দিনী
দ্রিমি দ্রিমি রবের সাথে রম্ভাসুরের নৃত্য,
রক্ষরাজ রম্ভাসুরের রোমান্চিত চিত্ত।
জন্ম লয়েই পুত্রটি তার করছে লম্ফঝম্ফ,
হুংকার সে দিচ্ছে এমন বাসবের হৃদকম্প।
আর মহিষের গর্ভ শিশুর প্রথম আবাসস্থল,
তাই মহিষাসুর নামটি তারে দিল অসুরদল।
দিনে দিনে মহিষাসুর শক্তিশালী ভীষণ,
তারে লয়ে রক্ষরাজের যতেক আস্ফালন।
স্বর্গরাজ্য আক্রমণের অসীম দু:সাহস,
মিলল সাজা হাতেনাতে পরাভূত রাক্ষস।
ইন্দ্রের বজ্রবাণেই রম্ভাসুরের মরণ,
সকল অসুর নিল তখন মহিষাসুরের শরণ।
ধ্যানের মাঝে অসুররাজের ব্রহ্মদেবের স্তুতি,
অবশেষে বরণ তারে করেন প্রজাপতি।
শুধান তারে–কি বর মাগ ওহে রক্ষরাজ,
তোমার মনের আশা এবে পূরণ করি আজ।
মহিষাসুর বলেন তাঁরে–মাগিনু অমরত্ব,
মৃত্যু যেন হয় না কভু–এমনতরো সত্ব।
সম্ভব নয়–সব জীবেরই অনিবার্য মুক্তি,
অমরত্বের বর প্রদানের নেইকো আমার শক্তি।
ব্রহ্মদেবের বাক্যে অসুর হয় না হতাশ মোটে,
ধূর্ত অতি–কথার ফেরে ভিন্ন পথে হাঁটে।
অন্য বর দিন প্রভু – ধূর্ত অসুর সত্তা
কোনো পুরুষ আমায় যেন করতে নারে হত্যা।
নারীরা সব শক্তিহীনা–তাদের কিসের ভয় !
অসুররাজের প্রার্থনায় ব্রহ্মদেবের সায়।
দেবতারা স্বর্গচ্যুত–শচীশ পরাজিত,
মহিষাসুরের হুহুংকারে সকল সুরই ভীত।
ব্রহ্মা,বিষ্ণু,মহেশ্বর – সবার মাথায় হাত,
প্রজাপতি নিজের বরে নিজেই কুপোকাত।
অবশেষে আটটি মাথায় বাহির হল বুদ্ধি,
সাপটি মেরেও অটুট লাঠি–হয় কার্যসিদ্ধি।
সৃষ্টি করেন দুর্গামাতা–অনুপমা পার্বতী,
দশভুজা শিবজায়া–তিনিই পরম সতী।
সব দেবতার বলে মাতা হলেন বলীয়ান,
মহিষাসুর বধে দেবী ত্বরায় আগুয়ান।
নারীর আবার শক্তি কিসে–নারী ত অবলা,
বশ করবো তারে আমি দেখিয়ে ছলাকলা।
আস্ফালন করে অসুর–আপন বলের বড়াই,
পনের দিন ব্যাপী চলে মরণপণ লড়াই।
তবে বল,ছল কোনকিছুই হয় না তার সিদ্ধ,
মা দুর্গার ত্রিশুল করে অসুররাজে বিদ্ধ।
নারীরা নয় শক্তিহীনা–মহিষাসুর ভ্রান্ত,
মায়ের পায়ের নীচে থেকেই সে আজকে শান্ত।
মহিষাসুরমর্দিনী মা–তাঁর অশেষ শক্তি,
করজোড়ে আরাধনায় কোরোগো তাঁরে ভক্তি।
কলিযুগের অসুরশক্তি হুঁশিয়ার সাবধান,
মাতৃশক্তি হাতেই তোদের বিনাশ হবে প্রাণ।
———————-
স্বপন চক্রবর্তী