অনুভবে তুমি
অনুভবে তুমি
মাত্র দু’দিন হলো
অকুস্থলে ফিরেছি।
জানতে চেয়োনা বেশী কিছু।
মুঠো ফোনে কথা তো হলোই;
শুধু জেনো আছি বেশ
এখানে চন্দ্রপ্রভা
মধ্যরাতের
আয়েশী আবেশ।
এখনো কাটেনি
রাত নির্ঘুম
ধুপছায়া ঘোর,
তোমার চোখে দেখা
অলস ভোর।
এখনো আরাম কেদারায়
বসে দেখছি একাকী
হালকা সাদা
মেঘের ভেলা,
চাঁদের আলোয়
দূরের আকাশ;
পানকৌড়ির ঝাঁক
উড়ে এলে দেখি
একলা রোদের
চিতায় পোড়া
সাদা কালোর
সুশোভন ক্যানভাস।
তোমার মনে পড়ে সীমা?
সর্বশেষ যেদিন আমরা
হেটেছি দু’জন স্বাধীন।
আলো ঝলমল
রুপোলি চাঁদের রাত্,
হৈমন্তি শুক্লপক্ষের
পূর্ণচন্দ্র তিথি।
প্রজাপতি ডানায়
উড়তে চেয়ে দু’জনে
আলাপনে মেতেছি
অনেক বাল্য স্মৃতি।
জ্যোৎস্না পালক বিছানো
মেঠো পথে
ফুরফুরে মেজাজে
কত যে হেটেছি হায়;
গায়ে গা-ঘেষে
লুটোপুটি খেয়েছি কত
সদ্যই বৃষ্টি থেমে যাওয়া
ঠান্ডা হাওয়ায়।
তারপর ক্লান্ত শ্রান্ত
হাটতে হাটতে
হরিজন পল্লীর কাছে
এসে দাঁড়িয়েছি
মংডুর দাওয়ায়।
মন দিয়ে শুনেছি
ববিতা কুজুরের
শাঁওতালি ভাষায় গাওয়া
প্রতিবাদি গান
আজন্ম বঞ্চনা গীতি।
যদি হতাম হেডম্যান;
ডাক্তার বাবু হে!
চেরেতে বসতাম
পা দু’টি দুলাতাম
জনে জনে পঁচিশ টাকা
ভিজিট লিতাম রে……………..
তারপর বাড়ি ফিরে
শুনেছি গালাগাল।
হলো জানাজানি,
কানাকানি পাড়াময়,
বন্ধ হলো মেলামেশা,
অবিরাম কানাঘুষা-
স্বপ্নেরা শুধু থেকে গেল
কল্পনা রথে।
তখনো হয়নি গাঁথা
বিনি সুতোর মালা;
শুরু হলো মেঘ-বৃষ্টি-বাদল
বৈরী হাওয়ার পালা।
তোমার নির্বাসন হলো,
আমারও পরিত্রাণ।
কি এক হেঁচকা টানে,
বিচ্ছিন্ন হলাম দু’জনে।
তারপর কেটে গেল
কুড়ি বসন্তের পূর্ণচন্দ্র
জীবনের কাব্যময় স্তবক।
যদি কোনদিন কাকতালে
আবার দেখা হয় দু’জনার;
হয়তো অচেনাই থেকে যাবে
বয়সের ভারে ক্ষত বিক্ষত
বদলে যাওয়া অবয়ব।
বয়সের এই মধ্যগগণে,
হঠাৎই আনমনে স্মৃতিতে;
এলে তুমি কাছাকাছি।
কান পেতে শুনতে চেয়েছি
তোমার চিরচেনা কথা,
আমার অদেখা চোখে।
ডুগডুগি বাজিয়ে
বায়োস্কোপের আলো ঝলকানি
তোমার প্রতিচ্ছবি মোড়ানো
রুচির কুতুবমিনার।
বারবার শতবার
দেখা হলো কেবল
তোমারই মুখখানি।
দুই দশকের বড় ব্যবধানে,
আবার দু’জনে
দেখা হলো সহসা,
স্টেশনের ওয়েটিং রুমে।
আমার গন্তব্য কর্মস্থল,
তোমার বাড়ি ফেরা।
চিনতে পারিনি
কেউ কাউকে,
শুধুই মায়াবি
চিরচেনা কন্ঠস্বর,
অবিনশ্বর।
ফেলে আসা দিনগুলি,
যেন প্রেমের অক্ষয় তাবিজ,
দেদীপ্যমান, ভাস্বর।
দেখা হলো,
কথা হলো
তবুও কি যেন
থেকে গেল বাকী?
বিনিময় হলো
মুঠো ফোনের নম্বর।
বিদায়ের ক্ষণ
নিরব উচ্চারণ,
যেন সুরা শুন্য সাকী।
আবার দেখা হোক
আমাদের নিভৃতে!
হৃদয় মরুতে এসো
কোন বৃষ্টি স্নাত ভোরে।
কথা হবে প্রাণখোলা,
সুরেলা বাহুডোরে।
কেউ কারো কাছে
কোনদিন চাইনি কিছু,
চাইনেও কোনকিছু।
চেয়েছি শুধুই
ভাল বাসাবাসি,
না বলা গল্প কথার
আলাপচারিতায় পাশাপাশি।
মেঘেদের উড়ো চিঠি বিলিয়ে
জীবনের বহমান নদী
কুলু কুলু বয়ে যায় যদি?
যাকনা ভেসে,
অপেক্ষার নিষিদ্ধ ভোর;
তোমার অনুভবে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, দক্ষিণ বনশ্রী, ঢাকা।
Subscribe
Login
0 Comments
Oldest