কোরোনার শিক্ষা

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

অবশেষে নাকি কোরোনা জীবাণু স্বর্গে দিয়েছে হানা

অমরাবতীর সভায় এখন নাচ গান সব মানা।

কোরোনা জীবাণু সংক্রমণে পুণ্য আত্মা মৃত,

চিত্রগুপ্ত কথনে তিনি স্বর্গেতে উপনীত।

অতএব যা হবার হয়েছেকোরোনা গিয়েছে সাথে,

শমন দেবের বোকামির ফল ফলে গেছে হাতেনাতে।

রম্ভা মেনকা আর সুন্দরী রূপসী উর্বশী,

এতদিন পরে ছুটি পেয়ে তাঁরা মনে মনে খুবই খুশী।

নাচা গানা ছাড়া ইন্দ্র প্রাসাদে সব ধরণেরই কাজে,

ব্যস্ত থাকতে হতই তাঁদের সকাল দুপুর সাঁঝে।

কোরোনার ভয়ে এখন সবার নিষেধ প্রাসাদে প্রবেশ,

শচীদেবী হায় তাঁর খাটুনির নেই বুঝি কোন শেষ।

দেবরাজ সাথে প্রায়শই তাঁর চলছেই খিটিমিটি,

শান্তি বজায় রাখতে বাসবও করছেন খাটাখাটি।

তবে বসে থেকে থেকে অপ্সরাদের মেদ যে বর্ধমান,

দেবতা সকলে চিন্তান্বিতসবারই হৃদয় ম্লান।

এদিকে নারদ বিণা যন্ত্রটি ভাল করে ঝেড়ে ঝুড়ে,

তুলে রেখেছেন তাকের ওপরে তাঁর দোতলার ঘরে।

বাড়ির বাইরে ঢেঁকিটিকে তিনি রেখে দিয়ে চুপিচুপি,

মুখোশ লাগিয়ে আছেন ভিতরে মাথায় বাঁদর টুপি।

বৈকুণ্ঠেতে দেব নারায়ণ একটু হলেও খুশী,

বহুদিন বাদে দেবী লক্ষ্মীর মুখে অমলিন হাসি।

মর্ত্যবাসীর ডাকের চোটেতে কান সদা টনটন,

তারপরে যখন তখননারায়ণ,নারায়ণ।

একান্তে কোন গল্পগুজবে বারেবারে যত বাধা,

কোরোনা করেছে করুণা তাঁদেরসাদা মনে নেই কাদা।

শিব পার্বতী কৈলাসে বসেছেলেমেয়ে চুপচাপ,

নন্দী ভৃঙ্গী আসছে না কাজেদুর্গা মায়ের চাপ।

দুটো হাত দিয়ে কখনো কি করা যায় কাজ অতশত,

দশ হাত যদি লাগান কাজেতেসাবান কোথায় অত !

ছেলেমেয়েগুলো পাজী নচ্ছারনিস্কর্মার ঢেঁকি,

মায়ের কষ্ট দেখেও তারা হয় না এট্টু দুখী !

বাবা ভোলানাথ ধ্যানেই মগনদিনরাত এক তাঁর,

মহিষাসুরের কথাই দেবীর মনে ঘোরে বারবার।

বাঁচলে আজকে এই বিপদে সে থাকতো দেবীর পাশে,

কোরোনার হেতু অশান্তি শেষে আজ কিনা কৈলাসে !

স্বর্গের যত রথ চলাচল হয়ে গেছে নিস্তব্ধ,

সুদর্শনও নিষ্ক্রিয় আজকোরোনার ঘায়ে জব্দ।

মর্ত্য থেকে প্রসাদ আসাও এক্কেবারেই বন্ধ,

দেবতারা আজ একে অন্যের উপরে করেন সন্দ।

সাবান, মুখোশ তৈরীর ভার বিশ্বকর্মা হাতে,

চিন্তায় তাঁর ঘুম ছুটে গেছে দুপুরে কিংবা রাতে।

একটা মুখোশে ধরাতেই হবেব্রহ্মা চতুরানন,

হরেক বাহন হরেক আকারকাজটা শক্ত ভীষণ।

কৃষ্ণের থেকে গোপিনীরা সব আজ যে অনেক দুরে,

বাঁশিটি বাজান বিষণ্ণ মনে কিন্তু কেমন বেসুরে।

সবকিছু মিলে স্বর্গের হাওয়া বেশ ঘোরতর বুঝি,

শমন দেব আর চিত্রগুপ্তদায়ী তাঁরা সোজাসুজি।

এদিকে যে দুই কবিরাজ ভাই টিকা তৈরীর তরে,

নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সকাল সন্ধ্যা দিয়েছেন এককরে,

তাঁরাও যে দেখি হাল ছেড়ে দিয়ে বিষ্ণু শরণাপন্ন,

হে প্রভুকিছু করুন এখনি করোনা তাড়ন জন্য।

হাসেন বিষ্ণুঅশ্বিনী ভাই আমার নেই শক্তি,

করোনার থেকে কেমন দেবো তোমাদের আজ মুক্তি।

তার থেকে যাই সকলে এখনি দেবাদিদেবের কাছে,

অমৃত সেই মন্থন কথা নিশ্চয় মনে আছে।

ত্রিভুবন যবে গরল বাষ্পে ধূমময় চৌদিক,

কণ্ঠে সে বিষ করেন ধারণশিব তাই সৌভিক।

নীলকণ্ঠ জগতের পিতাতিনিই পরিত্রাতা,

ঘরনীটি তাঁর জগৎজননীমোদের শক্তিমাতা।

চল এবে যত দেবদেবীগণ কৈলাস পর্বতে,

শিবশম্ভুর স্তবগান গাও ধ্যানগম্ভীর প্রাতে।

তিনিই মোদের সহায় আজিকে কোরোনার দুর্দিনে,

যার উদ্ভব হয়েছে মর্ত্যেমাংশাসী দেশ চিনে।

স্তবস্তুতি শুরু অনিন্দ্য সুরে আহা কি মধুর প্রভাত,

নীলমাধবের রূপে নারায়ণ প্রভু শ্রীজগন্নাথ।

জগৎপিতার ধ্যানভঙ্গেতে  জগৎপতির স্তব,

এমন সময় কানে ভেসে আসে কোকিলের কুহু রব।

আঁখি দুটি মোর হয় অচ্ছদচৌদিকে রবিকর,

তবে কি ছিলেম স্বপনের মাঝেকাটে মোর ঘুমঘোর।

প্রণতি জানাই জগৎপিতাকেনীলকণ্ঠের চরণে,

তিনিই মোদের রক্ষাকর্তাকোরোনা গরল পানে।

সঙ্গে জননী শক্তিরূপিণী মহামায়া মাতা শিবাণী,

তাঁর বরাভয়ে কোরোনার থেকে মুক্ত হবেই ধরণী

ভোরের স্বপন সত্যই হয়মোর স্থির বিশ্বাস,

জীবাণু বিহীন বিশ্বে মানুষ অচিরেই নেবে শ্বাস।

পরিশেষে মোর একটিই কথা আজ সবাকার প্রতি,

হয়েছিনু মোরা গর্বোদ্ধততারই এই পরিণতি।

সবার ঊর্ধ্বে তিনিই সত্যতিনি বিনা কেহ নাই,

প্রমাণিত আজি নিয়তি সমখে মোদের তুচ্ছতাই।

ত্যজ হে দম্ভতুলে ধর সবে হৃদয়ের দর্পণ,

হানাহানি আর ভেদাভেদ নয়অন্তর অর্পণ।

সার্বভৌম শক্তির সনে কর এবে ক্ষমা ভিক্ষা,

ভোরের স্বপন দিয়ে গেল মোরে সেই অনুপম শিক্ষা।

————————————————————

0

Publication author

1
একটি বহুজাতিক সংস্থায় প্রবন্ধক পদে কর্মরত ছিলাম। ২০১৭ সালে ৬০ বছর বয়সে অবসর নিয়েছি । এখন কবিতা ও গল্প লেখা আমার অবসরের সাথী।
Comments: 0Publics: 25Registration: 26-08-2020
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।