ছোট্ট এই কফি হাউজটা
ডিজিটাল যুগের তেলেসমাতি
হোয়াটসঅ্যাপে কুড়ি বছর আগের বন্ধুদের মাতামাতি।
যখন শুনি সকলের কণ্ঠস্বর
মনে হয় ফিরে গিয়েছি কৈশোর
ফিরে গিয়েছি –
টিনের ভাঙা বেড়া লিয়াকত আলী উচ্চ বিদ্যালয়।
পুকুর পাড়ে কদম গাছ, কদম পড়তো টিনের চালে
ঝিমিয়ে থাকা বন্ধুগুলো জাগতো হুমড়ি খেয়ে।
জেঠুয়ামুড়া ছিলো যাদের বাড়ি
সকাল-বিকাল নৌকায় দিতো পাড়ি।
যখন চোখের সামনে একযোগে দ্যাখি –
কুড়ি বছর আগে হৈ-হুল্লোড় করা বন্ধুদের মুখ
মরুর তপ্ত রোদে পুড়া হৃদয়ে পাই অতৃপ্ত সুখ।
যখন দর্পনে দ্যাখি সফেদ চুল, দাড়ি, গোঁফ
আঁধারে হারিয়ে যায় বিবর্ণমুখ –
এই বুঝি ডাক এলো –
ছেড়ে যেতে কফি হাউজের আড্ডাটা
আর বুঝি জমাটবদ্ধ হবেনা হোয়াটসঅ্যাপ নামে
ছোট্ট এই কফি হাউজটা।
মনির, মোশারফ, মোর্শেদ –
মাড়ায়নি কভু কারো পাঁকা খেত
খুজবে না আর তারা আমাকে
যখন হারিয়ে যাবো একদিন মহাকালের গর্তে।
বাউণ্ডুলে, যাযাবর, অ-কবি যারা ডাকতে
আমার স্মৃতি আসবে কি কভু তব হৃদয় নাড়তে?
যখন দ্যাখবে স্টেশনের কফি হাউজে
মাথায় লম্বা চুল, কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ –
গায়ে ধুসর ধুতি, হাতে শোকর গুজারের পুতি –
সেইদিন বন্ধু ব’লে বুকে জড়িয়ে ধরবে কি আমায়?
নাকি পোশাক ময়লা হবে বিধায় –
দশ টাকার কফি দিয়ে করে দিবি বিদায়?
ইমরান,আক্তার, মজিব যেন সজীব দূর্বাঘাস
আমার স্থানটি পূরন করতে মজিব কবিতা লিখবে নিয়ে পাতিহাঁস।
কুড়ি বছর পর –
হোয়াটসঅ্যাপ বেঁধে দিলো ভালোবাসার ঘর
হাজার ক্রোশ দূরের মানুষ এলো কাছে
সব বন্ধু জড়ো হলো ভালোবাসার খুপরিতে।
প্রথম বেঞ্চে বসা নিয়ে হতো কতো আড়াআড়ি
কামরুল,আকরাম,জসিমের মন কষাকষি।
আমি অধম-নরাধম ছিলাম না পটু
দক্ষিণা বাতাসে ঢোলকলমির চুল উড়া দ্যাখে শুনতে হতো কথা কটু।
ছোট্ট কফি হাউজের বন্ধুরা –
এই বাউণ্ডুলেকে কোথাও খুঁজে নাহি পাও
পাগলা গারদে যেন যাও
মান্নাদে-র রমা রায়ের মতো যদি পাও।
মনে হলে সেই কথা,বিষাদে ছেয়ে যায় হৃদয় পাতা
বেলা শেষে এসে দ্যাখি শূন্য জীবনের খাতা।
৩১/০৭/২০২২ সৌদি আরব