তিলোত্তমা
তিলোত্তমা যেদিন আলো দিয়ে আমার নির্মল শূন্য হৃদয়ে
আলোর মিছিল জ্বালিয়ে আলোকিত করেছিলে,
সেদিন পৃথিবীর বুকে ছিলো না কোন কান্না,
নিস্তব্ধ ছিলো শত শত নগরীর কোলাহল,
শুধু তুমি ছিলে আমি ছিলাম স্বপ্নিল অনুভবে,
প্রকৃতির নিরন্তর ছুটে চলা চঞ্চল ঝরনার মতো
দিবানিশি দুজনার উন্মত্ত প্রেমের কল্পিত খেলাঘর সাজিয়ে,
কখনো মেঘের ভেলা ভাসিয়ে দূর দিগন্তে,
কখনো পর্বতে ঘেরা গহিন সবুজ অরণ্যে,
কখনো তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে অচিন দেশে,
কখনো সাগরের অতল তলে স্বপ্নরাজ্য গড়ে,
আরও কতো শত স্বপ্ন উড়াতাম গাঙচিল হয়ে নীল আকাশে।
তিলোত্তমা প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তোমায় দক্ষিণায়নের বৃক্ষ তলে,
তোমার এক চোখে ছিলো শুকতারা অন্য চোখে সন্ধ্যাতারার আলো,
পিঙ্গল বর্ণের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়েছিলো বসন্তের সুবাতাস,
তোমার কপোল ছুঁয়ে খেলা করেছিলো কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভার নির্যাস,
আমি অবাক নয়নে তাকিয়েছিলাম তোমার মায়া ভরা স্নিগ্ধ মুখপানে,
তোমার রক্তিম অধরের মিষ্টি হাসি আমাকে উন্মত্ত করে দিয়েছিলো,
আমি তোমার মাঝেই খুঁজে পেয়েছিলাম আমার স্বপ্নিল সুখের আকাশ।
তিলোত্তমা সেদিন ছিলো না অমানিশার কালো নিশি রাত্রির অবসাদ,
ছিলো না গভীর রাতের অশরীরী কোন আত্মার করুণ আর্তনাদ,
ছিলো না ধূসর মরুর অশান্ত কোন তৃষিত ধু-ধু প্রান্তর,
সেদিন আকাশের বুকে ছিলো জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা পূর্ণিমার চাঁদ,
ছিলো শরৎ প্রভাতের শিশির ঝরা শিউলি ফুলের স্নিগ্ধ সুবাস,
ছিলো শুভ্রতায় ভরা কাশবনের ধারে নদীর জলে দু’জনার অন্তরঙ্গ সূর্যস্নান,
আর পৃথিবীর বুকে শত বছর পর পর ফিরে আসার আজন্ম স্বাদ।
তিলোত্তমা আমি তোমারই আকর্ষণে বারবার ফিরে আসি এই ধরিত্রীর বুকে,
নব নব রূপে শুধু তোমারই জন্য ফিরে আসি আজন্ম তৃষা নিয়ে,
যে অনন্ত তৃষার জন্ম দিয়েছিলে আমার বক্ষের অন্তরালে,
আজো কেউ শীতল জলে শীতল করেনি সেই তৃষিত মনের শূন্য আকাশ,
তুমি ছাড়া কেউ বুঝেনি আমার মনের নিত্য অবসাদ,
তিলোত্তমা কেউ পারেনি, শুধু তুমিই দিয়েছিলে একটু শান্তি সুখের সুবাস।