দয়া কর !
ভাঙছে, দুদ্দাড় করে ভাঙছে,
দেশ, প্রদেশ জেলা, মহকুমা, মহল্লা, ঘরবাড়ি আর সশব্দে চিৎকার করে ভাঙছে মানুষ।
ভেঙ্গে পড়ছে, সৌধ, অহংকার,
রূপ রস গন্ধ স্পর্শ প্রেম প্রীতি অলংকার !
নিঃশব্দে ভাঙছে মানুষের মনুষ্যত্বের খোলস, সভ্যতার ঠুনকো মুখোশ, নৈতিকতার বিবর্ণ প্রতিরোধ !
ভাঙ্গছে নরম কোমল নববধূর অসহায় আর্তি,
নির্দয় অস্ত্রাঘাতে দুনিয়ার সবচেয়ে সুরক্ষিত মায়ের জঠর থেকে
নিশব্দ ঘৃণায় থুথু মুখে বেরিয়ে আসছে ঈশ্বরের পবিত্রতম সৃষ্টি – কোমল শিশুটি -!
গলে পচে মৃত মায়ের নিরাবরণ দেহ থাকে বেরিয়ে আসছে রক্ত মেশান দুধের ঋণ-
ক্লান্ত, হতাশ, ভরসাহীন।
চরম হাহাকারে ডুবে যায় আমার হতবাক অস্তিত্ব, আমার প্রত্যয় !
পিতার বুক ভাঙ্গা আর্তনাদ, বৃদ্ধ চাপা পড়া শান্তির অবসরের অস্তিত্ব ভেঙ্গে
বেরিয়ে আসছে গনগনে আগুনের মত সময়ের সর্বগ্রাসী অভিশাপ !
কালীয়নাগের মতো,
সমস্ত ভরসার আলো’কে সে গিলে ফেলতে চায়,
অন্তহীন একমুখী গভীর তমসায়, ফেরার কোনো পথ থাকে না আমার !
ভাঙছে সব, ভাঙছে মানুষ, ভাঙ্গছে মন্দির, মসজিদ, গির্জা কাবা,সমস্ত উপাসনা গৃহ
ভাঙছে কাবা, উপাসনা, গান, কবিতা,
ভাঙ্গছে মন, ভাঙ্গছে দয়া, মায়া, মমতা, দান, ধর্ম,
ভাঙ্গছে মানুষের সভ্যতার ভান, ভাঙ্গছে বিপন্ন হৃদয় !
শিল্প, ফুল, লতা পাতা, কীট পতঙ্গ,
বিষিয়ে যাচ্ছে বায়ু, নিঃশ্বাস !
খাদ্য শুধু অর্থহীন অভিশাপ, পানীয় শুধু ভাই বন্ধু সন্তানের থকথকে রক্ত !
ঈশ্বরের দেওয়া সমস্ত আমার জগৎ ভেঙে খানখান হয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে
উৎক্ষিপ্ত হচ্ছে গনগনে ঘেন্নার লাভার মত, ছড়িয়ে পড়ছে মাটিতে,
নক্ষত্রবেগে বিলীন হচ্ছে শূন্যে, বিলীন হচ্ছে ‘কিছু নেই এ-‘
যেন এগুলো কোনদিনই আমাদের ছিলনা,
যেন সেই সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে আমরা ভাইয়ের রক্তে কুলকুচি করে সন্তানের মাংসে ভোজ সারি !
যেন মায়ের রক্তে হাত ধুয়ে পিতার খুলিতে ভাত খাই,
যেন পত্নীর গর্ভে হাত ভরে হাসতে হাসতে আমরা, মানুষের ছদ্মবেশে স্বয়ং ইবলিশ –
সন্তানের দেহ অক্লেশে টেনে নিক্ষেপ পড়তে পারি আগুনে।
আমি বিপন্ন যুগান্তরের নগণ্য এক ভেঙে যাওয়া অস্তিত্ব,
আস্তাকুড়ে র কবি,
আমি জানিনা এ আমার ভ্রম কিনা,
জানিনা এ যা দেখছি আমি সে কেবল আমার দুঃস্বপ্ন কিনা,
জানিনা এ আমার কোন পাপের শাস্তি !
অথবা,
আমি জানিনা এ দেখা খালি আমার পাপের ফল কিনা।
আমি জানিনা. আমি কিছু বুঝিনা !
আমি তোমার সৃষ্টির কোণে এক নগন্য মানুষ, এক সামান্য ছন্দবাহ কবি
আমি আজ সব, হারাচ্ছি, হারাচ্ছি আমার ছন্দ, আমার গান, আমার কবিতা,
আমার স্বর, আমার বাণী, আমার আমিকে হারাচ্ছি প্রতি পলে
হারাচ্ছি আমার সব,
হে দয়াময়, আমি আজ তোমার দেওয়া এই অপরূপ জগৎ হারাতে বসেছি !
আমাকে আর একবার সুযোগ দাও,
হে দিন দুনিয়ার মালিক,
হে দয়াময়, হে আমার সর্বশক্তিমান করুনার মহাসমুদ্র,
আমি আগামী সমস্ত জন্ম জন্মান্তর তোমার তৃণ সমাকীর্ন সবুজ ঘাসের বসনের প্রান্ত চুম্বন করে কাঁদবো,
আমি আগামী সমস্ত সকালগুলি তোমার রক্তবর্ণ পুব দিগন্তে অশ্রুমোচন করে কাটাবো,
আগামী সমস্ত পল অনুপলগুলি পশ্চিমে তোমার গৈরিক সন্ধ্যাকাশের উত্তরীয়র প্রান্ত হাতে নিয়ে,
তোমার সৃষ্টির কীটানুকীটের দাসানুদাস হয়ে কাটিয়ে দেব,
তুমি একবার এসে দাঁড়াও,
তোমার মঙ্গল হাতের প্রবল স্পর্শে আটকাও আমার শেষ আবাস,
আমার শেষ আশ্রয়,
আমার প্রত্যয় — আমার তোমাতে বিশ্বাস।
হে দয়াময়, হে শেষ আশ্রয়, আমাকে বাঁচতে দাও, আমাকে দয়া কর !