বিস্কুট
‘মুখে দে’ বিস্কিট ঘোর অবেলায় খাচ্ছিলাম
অভাবে ও কোনো বাজারি গভীরতা না ভেবে
কফির কাপে চুবিয়ে তাদেরকে পেটের ভেতরে
একের পরে এক, অভ্যাসে বড় সুখে নিচ্ছিলাম।
তখনি বিস্কুটের মোড়কে পড়ে গেল দৃষ্টি।
তিপ্পান্ন গ্রাম বিক্কু, তার সঙ্গে আরো তের গ্রাম
মুফতে দিচ্ছে কোম্পানি, আহা কৃপার বৃষ্টি!
মোটমাট আটষট্টি গ্রামের দাম টাকা দশ।
তাহলে এক গ্রামের দাম কত হবে, ঘসঘস
হিসেব করেও স্থির কোনো সংখ্যা এল না,
কেজিই বা কত করে, মাথা সেটা নিল না
একটা সময়ের পর, একটার পর একটা সংখ্যা
পরপর আসতে শুরু করল সিরিজে সিরিজে
কে জানত, সংখ্যাও আসতে পারে এমন সেজে,
বিভ্রান্তিকর যা অন্তত আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধির বাইরে!
মাথাটাই শেষকালে ঘুরতে লাগল বনবন করে।
বিস্কুটের ভূমিকাও আমাদের আসল জীবনে
এ রকমই পৌনঃপুনিক, যে বেচারা গোনে
যে না গোনে, সবারই প্রতি দিন লাগে বিক্কু
সকালে অবধারিত চা এবং কফির সঙ্গে
বিকেলে, সন্ধ্যায়, রাতে এবং সব বেলা ছাড়া
যখন খুশি মুখে দিতে হাল্কা মামুলি কিছু মিছু
খাবার না থাকলে কোনো, মুখে ভরো বিস্কু।
অম্বল দূরে রাখতে হবে মস্ত বড় সহায়তা
আরেকটা সুবিধা হ’ল এর সহজলভ্যতা।
অতিথি এলে, অবশ্যই চায়ের সঙ্গে দাও
ন্যুনতম সৌজন্যের বিস্কিট, ভাঁড়ারে বাড়িতে
আর কিছু না থাকলেও এটা একটু থাকলেই
বেঁচে যাই আমরা ‘অভদ্র’ খ্যাতি পেতে পেতে।
শিশুর অন্নপ্রাশন, চা কী কফি সহ শীতে, গরমে
ভোজের আগে, অনুষ্ঠানের শ্রমে বা গপ্পের চরমে
এমন কী শ্রাদ্ধেও গুরুপাক খাওয়ার আগে
বা পরে, মুখে পাঠিয়ে দিই চা বা কফির সঙ্গে
অবধারিত ময়দার চালাকি পরিবেশন করি
আমরা, ঘোর সামাজিক লোক, মুখে হাসি ধরি,
ট্রেতে করে পরিচিত অপরিচিত সকলের দিকে
এগিয়ে দিই বিস্কুট কতই না রাগে, অনুরাগে।
আমাদের শুরু থেকে শেষে ছড়িয়ে পড়েছে
দিনরাতগুলোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে
জন্মের খুশি থেকে একেবারে শ্মশান পর্যন্ত
মিষ্টি, নোনতা কাজু, এলাচ দেওয়া বিস্কুট অনন্ত
ময়দাগোলক সদাবাহারী প্রিয় খোশ আহারই
ছোট বড় দামী সস্তা, লোভনীয় মোড়কে রকমারি
ওগুলোকে ছাড়া বেঁচে থাকা খুবই ঝকমারি।