বিস্ময়কর কিসমত
বিস্ময়কর কিসমত
মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম
বলি কিসমতের কথা এইবার,
সত্যিকারের মানুষ যারা দেবে নাড়া তাদের বারেবার।
নিভৃত এক পল্লীতে জন্মেছিল কিসমত নামের পোলা,
কালো বলে ঘৃনা পাইত অনেকেই নিতোনা কোলে দিতোনা একটু দোলা।
ছোট্ট বেলায় দুধের অভাবে করতো সে চিৎকার,
ফেলটু আর বার্লি ছিল তার প্রতিদিনের আহার।
কয়েক বছর এমন কতই দুঃখ সরলো না পাশ হতে,
এরি মধ্যে চলছিল তার লেখাপড়া আর খেলাধুলা কোনোমতে।
কিসমতের প্রান প্রিয় খেলা ছিল যে ফুটবল,
শত বাধায় নত হয়নি সে হারায়নি তার মনোবল।
এক সন্ধ্যায় হঠাৎ বাবা বলেছিল কিসমতের হাত ধরে,
জাদুরে আমার দেখে রাখিস তোর মা কে যদি আমি যাই মরে।
সত্যিই সে বুঝেনি বাবা কেন বলছিল এমন করে,
কদিন পরেই তার বাবা যে সব ছেড়ে চলে গিয়েছিল পরপারে।
অদ্ভুত এই দুনিয়া যে তার হয়ে ছিলো প্রতিকূল,
ব্যাথাতুর সেই জীবনের কথা বলতে যে আমি ব্যাকুল।
স্কুল থেকে এসে দেখতো নাই কিছু ঘরে খাদ্য তাই ক্ষুধার জ্বালায় সে কাঁদত ফুঁপিয়ে,
অন্যের দ্বারে কাজ করে তার মা সংসার চালাইতে উঠতোনা হাঁপিয়ে।
নামমাত্র পারিশ্রমিক আর এক বেলা খাবার তার মা পেতো,
নিজে না খেয়ে মা আনতো খাবার তাদের তরে হয়ে অনেক লজ্জিত।
ক্ষুধাতুর ভাই, বোন, মা, কিসমত খাইতো ঐটুকু খাদ্য মিলে,
দয়ার দৃষ্টিতে কেউ তাকায়নি ছিল কত ক্ষুধাতুর কিসমতের পিলে।
ইঁদুরের সাথে ঘুমাতো ঘরের আঁধারে মেঝেতে শুয়ে,
মা বলত তাকে হারাবেনা মনোবল পড়বে নাকো নুয়ে।
কষ্ট,অবহেলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো তার জীবন,
জাগো কিসমত অবাক করে দাও দুনিয়া! এইকথা বলে ছিল বারে বারে তার মন।
পুরাতন এক জার্সি তুলে নিয়েছিল তার গায়ে,
ময়লার স্তূপ থেকে পাওয়া ছেঁড়া জুতা জোড়া তুলে নিয়েছিল সে তার পায়ে।
হাই স্কুলের গন্ডিতে সে খেলছিল এক একটা ম্যাচ,
বড় বড় ক্লাবগুলোকে দেখাচ্ছিল তার খেলার কতইনা মারপ্যাঁচ।
অসাধারন কিসমতের খেলা পড়েছিল খ্যাতনামা কোচের চোখে,
কোচ সুযোগ করে দিয়ে বলেছিল দেশের দশের হয়ে খেলতে হবে যে তাকে।
কিসমত সে করেনি তো ভুল খেলতে অবিরত,
ক্লাব আর জাতীয় দলে খেলতো সে বীরের মতো।
বিশ্বকাপের খেলাতে কি চমক দেখিয়ে ছিলো,
অবাক করে বিশ্বকে বিশ্বকাপ নিজ দেশকে এনে দিলো।
আজ কিসমতের চোখে আনন্দ অশ্রু তাইতো সে সবার উদ্দেশ্যে কয়,
লক্ষ্য, পরিশ্রম, অধ্যবসায় রাখবে সাথে কভু রাখবে না ভয়।
হতাশা, বিফলতার পাত্তা না দিয়ে ছিনিয়ে আনতে হবে জয়,
চেয়ে দেখ! হাজারো বাঁধা গুঁড়িয়ে দিয়ে আমি কিসমত আজ এক বিস্ময়।