বৃহন্নলা
পুরুষত্বের নির্যাস থেকে আমার আদিম সৃষ্টি
হয়তো তোমাদেরই মতো…….
আগাছায় ঢেকে গেছে ওই কালো পাথর –
যার বুকে সভ্যতার একবিন্দু আলোও পড়ে না ।
অন্ধকারে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার,
অস্তিত্বের সংকটে আজও বেঁচে আছি
আমি – সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ভ্রূণ ,
যার অর্ধেকটা পুরুষত্ব আর বাকীটা
নারী মানসিকতায় ঢাকা ।
পরিচয়টা শুধু সমাজতত্বের ইতিহাসে,
গবেষণা আর তর্ক-বিতর্কের খতিয়ানে থেমে গেছে
পৃথিবীর মুক্তাকাশে সূর্যের আলো দেখে ,
সেদিন হলুদ পাখিটা বলে উঠেছিল –
সৃষ্টির আদিমতায় মিশে যাওয়া ওই অনাবৃত ঘ্রাণ,
আর জরায়ুর অন্ধকারে খুঁজতে থাকা –
নারী পুরুষের সহাবস্থান –
এটাই কি তৃতীয় লিঙ্গের বৈষম্য !
উপসংহারটা না হয় শেষ হোক –
সামাজিক দায়বদ্ধতায়
কোথা থেকে আমার সৃষ্টি , কতটুকু আমার পরিচয়
কিংবা আমি কে ?
এই প্রশ্নগুলো আজ হারিয়ে যায় –
তামাটে জং ধরা বিবর্তনের ইতিহাসে ।
আবেগের যন্ত্রনায় আর্তনাদ করে ওঠে –
ওই অন্ধকারাচ্ছন্ন ভ্রূণ ।
দাও না আমায় স্বীকৃতি –
আমি তো বৃহন্নলা !
আমার ভালোবাসা , আমার যৌনতা
হয়তো তোমাদেরই মতো ……
আমি অর্ধেক পুরুষ , অর্ধেক নারী হলেও
আমার স্বভাব নারীর মতোই ।
হাততালিতে জেগে ওঠে –
সমাজের বুকে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া
ওই বাঁজা মেয়েমানুষের কোল ।
আমি তো সেই জয়িতা মন্ডল ,
যাকে আজ বিচারপতির আসনে দেখতে পাও –
সংবিধানে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারে ।
তবুও আজ আমি উপেক্ষিত –
তোমাদের পাড়ায় আমাকে হিজড়া বলে ডাকে ।
হোক না বৃহন্নলার জন্য একটা কবিতা –
শারীরিক গঠন নারীর মতো হলেও ,
আমার কন্ঠ পুরুষতন্ত্রকে দাপিয়ে বেড়ায় ।
আমি সেই বৃহন্নলা,
আমি জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া
এক উপেক্ষিত সৃষ্টি ,
যার ছায়া মাড়ানো আপনাদের ধর্মে নিষিদ্ধ অথচ
আমি সেই শক্তি , নারী পুরুষের আবরনে ঢাকা
এক বৃহন্নলা মা –
সন্তানের প্রথম পরিচয়ের এক প্রতিকৃতি ।