সুলক্ষণা
দিনটা ছিল শনিবার16 ই বৈশাখ বিকাল চারটে আমার মায়ের প্রসব বেদনা উঠেছে ,
তার সাথে বাইরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির তান্ডব চলছে সেজেনো এক প্রলয় হচ্ছে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিছে। নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা এম্বুলেন্স ও সেদিন পাওয়া যায়নি।।
ডক্টর এককথায় না বলে দিয়েছে , এই ঝড় জলে তারা রোগী দেখতে আসতে পারবে না।
তখন , একমাত্র ভরসা ছিল পাশের গাঁয়ের দাইমা, ওই ঝড় জল মাথায় করে বাবা দাইমার হাতে-পায়ে ধরে তাকে আনলেন। সে বলল মায়ের অবস্থা নাকি খুবই খারাপ।
এক্ষুনি প্রসব করাতে হবে ,বাচ্ছা নাকি ঘুরে গেছে ।সময় তখন রাত্রি দুটো ঘরের ভেতর থেকে মায়ের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল ,হঠাৎ একটা কান্নার আওয়াজ। দাইমা আসে বললেন আপনার মেয়ে হয়েছে।।
ঠাকুমা বলল এ বাড়িতে লক্ষী এসেছে কে কোথায় আছিস শঙ্খ বাজা, উলু দে তোরা।বৌ কেমন আছে…. দাইমা খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল বউকে আমি বাচাতে পারিনি।। ঠাকুমা বলল বাড়িতে অলক্ষ্মী এসছে আমার সংসার টা এবার শেষ করে দেবে ।আমার পিসি বলে উঠলো এ যে রাক্ষসী জন্মে ই নিজের মাকে খেয়েছে ,এবার আমাদেরও খাবে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি লক্ষ্মী থেকে অলক্ষি তে পরিণত হলাম।আমার বাবা ছাড়া কেউই আমার মুখ দেখতে গেল না ।। কদিন পরে আমার নামকরণ হলো আমার বাবা সাধ করে আমার নাম রাখলেন সুলাক্ষণা।সবাই আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে, শুধু পাশে থেকেছে আমার বাবা তিনি বলতেন সুলামা একদিনে এরাই দেখবে তোমাকে ভালোবাসছে তুমি দুঃখ করো না। জানিনা আমি সুলক্ষণা কিনা তবে আজ আমি এক মস্ত বড় ব্যারিস্টার আজ আমার টাকা তে চলে চারটে অনাথ আশ্রম , যে পিসি একদিন আমায় রাক্ষসী বলেছিল আজ সেও তার সন্তানকে নিয়ে আমার সংসারেই থাকেন কারণ শ্বশুর বাড়িতে ঠাই হয়নি কন্যা সন্তান জন্মানোর জন্য। সেই কেসটা এখন আমিই লড়ছি, এখন আমি পিসির চোখের মনি।আজ দুইবছর হয়েছে আমার বাবা চলে গেছেন ।।আজ আমি সত্যি পেরেছি আমার বাবার দিয়ে নাম কে সার্থক করতে। এখন সবাই বলে আমি সত্যিই সুলক্ষণা।আমার বাবার মতন বাবা যেন ঘরে ঘরে জন্মায় তাহলে আর কোন মেয়েকে বোঝা হয়ে থাকতে হবে না… থাকতে হবে না।।