একটি শহীদের জন্ম !
আজ বেশ ঝোড়ো হাওয়া আর বাদলের দিন,
সম্মতির অবকাশ নেই যেন, কোথাও কোনো কোণে !
মিছিলে শোক কোথায়, মুঠো করা হাতে আজ ইস্পাতের মতো কঠিন প্রতিজ্ঞা,
রাস্তায় জনস্রোত যেন অজস্র বহমান নদীর মতো একমুখী
যেন সমস্ত পাথর ফাটিয়ে আজ নদীদের শপথ নেওয়ার দিন,
আজ সমস্ত ধারা উপধারা আইনের গণ্ডীকে
নীরব উপেক্ষার শক্ত পায়ে মাড়িয়ে যাবে – উজানের দিকে ,
যে দিকে শহীদ গেছে —
ঘাড়ের ওপর কালো চুলে ভর্তি মাথাটা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে !
যেমনটা হওয়া উচিত একটা বাঁশের চারপাইতে বাঁধা নিথর দেহের !
যেমনটা হওয়া উচিত উদ্ধত শহীদের মরণ ছাড়িয়ে যাওয়া রক্তশূন্য অস্তিত্বের !
ওরা ওকে বন্দুকের কুঁদো দিয়ে পিটিয়ে ছাতু করতে চেয়েছিলো,
নিরন্ন ক্ষুধার্ত ভুখা জনতা তাই ওকে অন্নের আশ্বাস করেছে —
ওরা ওকে গুলিতে গুলিতে ঝাঁজরা করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলো,
মাটি তাই ওকে পরম স্নেহে জড়িয়ে নিয়েছে – বুকে,
মা যেমন প্রিয় সন্তানকে আঁচলের মধ্যে জড়িয়ে নেয় আদরে,
ওরা ওর শরীর থেকে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে, শুষে নিয়েছে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত,
তাই সমস্ত আকাশ আজ লাল মেঘে ভিজে ঘন হয়ে আছে ওর অভ্যর্থনায় !
– ওরা ওর নাম সমস্ত জায়গা থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল,
তাই বৃষ্টিধারা বর্শার ফলকের মতো, মাঠে ঘাটে প্রান্তরে
সশব্দে আছড়ে পড়ে লিখছে ওর নাম, যেন লক্ষ মানুষের নির্ঘোষ !
ওরা ওর সমস্ত কবিতা রাস্তায় ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দিতে গিয়েছিল,
আজ সেই আগুন দাউ দাউ করে লেলিহান শিখায় ঘিরেছে দানবের প্রাসাদ !
আমি আজ এই ধ্বংসের মাঝে বেহালা বাজাব ! আমি নীরো নই – আমি সামান্য কবি !
আমি আজ এই সমূহ ধ্বংসলীলার মাঝে একটি সুর শুনবো বলে বসে আছি
— বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক !
সমস্ত শহর আজ উদযাপন করবে -একটি শহীদের জন্ম !