জনম দুখিনী
জনম দুখিনী
তুলোশী চক্রবর্তী
শ্বশানে গিয়ে চিতার ধোয়ারে যাবো বলে
অভাগিনী হয়ে আমি এসেছিলাম ধরাতলে,
একটি হৃদয় শুধু মোর ছিলো
টাকাহীন ছিলাম তাই কেউ আপন না করলো,
নিজ গৃহে পিতা মাতা কেহ মনের কথা না বুঝলো।
ভেবেছিলাম কোন একজন
হয়তো করবে আপন মোরে
হৃদয় খানি নিয়ে পৌঁছিনু তার দুয়ারে,
সে বলিল _এ পাগল কি জন্য এসেছো আমার কাছে,
চলে যাও ,মরে যাও ,বদনাম করো কেন মিছে।
বুঝিনু সেদিন ভবের খেলা
আপন কেউ নয়রে পাগলা
যার লাগি ছাড়বে প্রান
পেয়েছো কি আপনের সন্ধান?
সেই জন ফিরায়ে নিলো মুখ
কভু আর ফিরে না চাইলো
দুনিয়ায় কেহ না ছিলো এ অভাগার
বিনা দোষে মোরে সবে কলঙ্কিনী বানালো।
অভিমানে অনুরাগে মায়ামোহ ত্যাগ করে
জগতে সেদিন থেকে আমি মুক্ত স্বাধীন ,
আর থাকিনে কাউকে ভয়ে ডরে,
বুঝে গেছি আমি_
কেহ আমার নয় আমি কারো নই
আত্মার দেহধারী পরমাত্মার অংশ হই।
রাগেকষ্টে বিধাতারে বলেছিনু তবু_ প্রভু কেন পাঠালে মোরে জগত মাঝারে?
দীন হীন জনে কেউ আপন না করিল।
বিধি বলে _আমি ছাড়া অন্য আপনের কিবা প্রয়োজন ছিলো?
মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কেন করো এতো মায়া
একদিন ছাড়তে হবে তব এ কায়া।
মা পিতা সন্তান কাঁদলে একদিন দুদিন কাঁদবে,
মৃতদেহ না পুড়েই সন্তান সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা চাইবে,
কেন তবে মিছে কাঁদো বলো মোর কন্যে
এত শোক কার লাগি? কিসের জন্যে?
বহুতর কাঁদিছো তুমি ,নিজের দোষে জনম দুখিনী,
ক্ষোভ হইলে শীতল,চিরমুক্তি যদি চাও
ধরো ঈশ্বরের পদতল।
দেখো তব আর্তনাদ শুনেছে আকাশ শুনেছে বাতাস,
তবু আপন কেহ নাহি শুনিলো।
তীর সম বাক্যাঘাতে তোমারে বিধিলো,
আপন কে তবে?তুমি নিজে আমায় বলো?
এরপরে_ বলেছিনু যমরাজে বিধি হয়েছে বাম মম প্রতি
মোরে নিয়ে চলো তুমি দ্রুত গতি,
কিন্তু যম মোরে নাহি নিলো।
মনে মনে বলে যাই _বুঝতে সখা এ বেদনা
বুঝতে প্রিয় তুমি মোর মনের রোদনা
যদি ভালোবাসা কি তা জানতে ?
বলেছিনু বসুন্ধরার গায়ে করাঘাত করে
মাতা, স্থান দাও তব গর্তে শ্বশানের আঁধারে,
মাতা বলে _আকাশের তারাদের দেখ বহু যুগ ধরে রয়েছে জেগে
শত বর্ষ আয়ু নেই তব, কেন যাবে তবে হেরে ,
কেঁদে যাও যত ক্ষত সাড়িবে আপনি,প্রকৃতির নিয়ম এটা যুগ যুগ ধরে,
কত শত কোটি মানুষ ,গিয়েছে হারিয়ে
কিছু থাকেনা চিরকাল ,জেগে ওঠো মায়া ত্যাগ করে।
সেইদিন ভুলেছিনু যত ছিলো স্মৃতি
জগতে আমার কেহ নেই গো ভারতী,
হে চিতার অগ্নিবহ্নীর ধোয়া তুমি আকাশে গিয়ে
পরমাত্মার পদতলে মোরে দিওগো মিশায়ে।