কৈলাসে বিলাস
জানো কি সেদিন সাত সকালে কৈলাসে মহাকাণ্ড!
ভোলা মহেশ ধমকে ওঠেন–সব কটা অপোগণ্ড।
বকছ কেন–কি হয়েছে – দেবী আসেন ছুটে,
ভোরের বেলার শরীরচর্চা গেলই বুঝি টুটে।
বলেন বাবা – শুনেছ কি ছেলেমেয়ের কথা,
তোমার জন্যে আজকে ওদের বিগড়ে গেছে মাথা।
একা একাই মর্ত্যে যাবে ঐ চার ভাইবোনে,
ফুটবল আর ক্রিকেট নাকি ওদের সদাই টানে।
একটা গোলায় বাইশজনে করছে লাথালাথি,
বুঝতে নারি তাই নিয়ে কিসের মাতামাতি!
আর ক্রিকেট খেলায় মত্ত থাকে যত রাজ্যের কুঁড়ে,
উঠল বাই মর্ত্যে যাবে তাই দেখার তরে।
ওদের নিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার বোঝো ঠ্যালা,
মোর নিষেধ শুনলে আগে হত কি এমন জ্বালা !
ভোলানাথের কথা শুনে মহামায়ার রোষ,
গর্জে ওঠেন–বুঝলাম হায় সবই কপাল দোষ,
ছেলেমেয়ের এহেন হাল–দায়ী হলেম আমি,
উনি ধোয়া তুলসীপাতা–শ্মশানবাসী স্বামী।
কোন্ ভরসায় ওদের আমি রাখব তোমার কাছে !
নেশার ঝোঁকে তোমার কি আর জ্ঞানগম্যি আছে !
আচ্ছা বেশ বাপের বাড়ি এবার যাব একা,
কত ধানে কতই চাল,বুঝবে তখন খোকা।
যেই না বলা মহেশ্বর অমনি কুপোকাত,
দশভুজার এক চালেই শিবশংকর মাত।
তোষামোদ করেন তিনি মহামায়ার তরে,
ঘাট হয়েছে,চাইছি ক্ষমা–কহেন করজোড়ে।
তোমায় ছাড়া আমি হলেম ফণী মণিহারা,
ঐ নন্দী ভৃঙ্গী ওরা দুজন পাজীর পাঝাড়া।
মোর মাথাটি করল গরম ওরাই ভোরের বেলা,
মর্ত্যে নাকি ছেলেমেয়ে দেখতে যাবে খেলা।
ওদের কথায় আমি মোটেই করছি না বিশ্বাস,
দুটোই ঘোর মিথ্যাবাদী–নচ্ছার,বদমাশ।
মহামায়ার মুখে এবার মিটিমিটি হাসি,
ভোলানাথের প্রাণে যেন বাজায় মোহনবাঁশি।
বলেন দেবী–ঠিক শুনেছ–নয়কো মিথ্যে মোটে,
খেলা দেখার জন্যে ওদের মনটা এখন ছোটে।
বলছোটা কি – শুধান শিব – ব্যাপারটা সব সত্যি !
ধরায় যাবে একাএকা – ওরা সব একরত্তি !
ভাবছ কেন মিছামিছি–পাচ্ছ কেন ভয় !
বলেন মা – হাতের কাছেই আছে যখন উপায় !
যার ফলে মরবে সাপ–ভাঙবে না তো লাঠি,
ওরা ঘুরুক ডালে ডালে–আমি পাতায় হাঁটি।
কি উপায়–জানতে ভারী উৎসুক হন ভোলা,
আনছি টিভি রঙিন হেথা–দেখবে সবাই খেলা।
পক্ষীরাজ গেছে উড়ে কালকে আমেরিকা,
ছেলেমেয়ে ওদের তুমি কোরো না বকাঝকা।
মর্ত্যধামের সেরা টিভি আসছে কৈলাসে।
সংগে আছে টাটার যাদু – অনুষ্ঠান সব আসে।
দেশবিদেশের অনুষ্ঠান দেখবে যেমন খুশী,
ওদের মুখের হাসির থেকে আর কি চাই বেশী !
সব শুনে মহাদেবের চিন্তা হল দূর,
পাশের ঘরে ছেলেমেয়ে সব করছিল ঘুরঘুর।
হৈ চৈ করল সবে – আনন্দেরই বাণ,
সেরা টিভি নিয়ে হাজির পক্ষীরাজ যান।
তোমরা যদি কখনো কেউ যাও গো কৈলাসে,
দেখবে টিভি আছে রাখা মহেশ্বরের পাশে।
শ্মশান ঘোরার ঝোঁকটি বাবার গেছেই এখন টুটে,
ঘরের থেকে বাইরে যেতে চান না তিনি মোটে।
কল্কে মুখে চশমা চোখে–বোকা বাক্সের টানে,
মর্ত্যবাসীর আকুল ডাক ঢুকছে না আর কানে।
—————————————————
স্বপন চক্রবর্তী ।