গল্প হলেও সত্য।

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

 

বহু বর্ষ অতীতের কথা আজিও প্রাসঙ্গিক,

যদিও ব্যস্ত যান্ত্রিক যুগে নয় মোটে স্বাভাবিক।

তবুও আছে ব্যতিক্রমী যুগে যুগে ঊজ্জ্বল,

তাঁহাদের গুণে এখনো সূর্য মহাকাশে প্রোজ্জ্বল।

চন্দ্রাতপের কোমল প্রভায় উদ্ভাসিত বিশ্ব,

এমন মানব ব্যতীত ধরণী হইত বুঝিবা নি:স্ব।

পুরাকালে কোনো রাজ্যপ্রান্তে এক যুবকের বাস,

গেহটি সতত শান্তির নীড় ছিলনা কোনোই রাস।

পিতা মাতা দোঁহা সেই যুবকের অশক্ত তথা বৃদ্ধ,

ঈশ্বর ধ্যানে তনুমন ছিল অহোরাত্রই ঋদ্ধ।

রাজ সেবকের সুকর্মে ছিল যুবকটি ধন্য,

দিবা অবসানে ফিরিত সে ঘরে শরীরটি অবসন্ন।

পরিচারকের তত্বাবধানে দিবাভাগে মাতাপিতা,

যুবক পুত্র শুনাইত দোঁহে নিশাকালে পূত গীতা।

বিনিদ্র রাতি কাটে যুবকেরকদাচিৎ ঘুমঘোর,

জনক জননী অপার সেবায় কখন যে নিশিভোর

যুবকের মতে পিতামাতা সেবা জগতে শ্রেষ্ঠ কর্ম,

সেই কর্মেই আত্মতৃপ্ত তাহার জীবন ধর্ম।

ঈশ্বর সেবা কিবা প্রয়োজন পিতামাতা দেবদেবী,

দোঁহাই ছিলেন যুবার জীবনে ঊষার দৃপ্ত রবি।

মিত্রের দল যুবকের সনে করিত সতত ব্যাঙ্গ,

কহিত তাহারেবন্ধু তোমার অদ্ভুত অতি রঙ্গ।

পিতামাতা সনে যে সময় তুমি কর প্রতিদিন ব্যয়,

তাহাতে তোমার ঈশ্বর লাভ নিশ্চিত ছিল হায়।

মাতাপিতা সনে হেরি হে বন্ধু অতীব ভক্তিভাব,

ভগবানে সঁপ তনুপ্রাণ হইবে মোক্ষলাভ।

যুবকটি হাসেপ্রত্যুত্তরে নীরব থাকাই শ্রেয়,

মিত্রজনের নয়নে বুঝিবা সেহেতু অধিক হেয়।

এদিকে স্বর্গে পরমেশ্বর তিনি সবেরই সাক্ষী,

যুবকের প্রতি দুর্ব্যবহারে যারপরনাই দু:খ্খী।

ভাবিলেন তিনি যুবাটির সাথে করিবেন সাক্ষাত,

রাত্রি গভীর, গেহের দুয়ারে সহসাই করাঘাত।

অসময়ে কে বহির্দুয়ারেশুধাইল সেই তরুণ,

অর্গল হায় কেমনে খুলিবকণ্ঠস্বর করুণ।

পিতামাতা সনে সেবার মন্ত্রে অধুনা আমার দীক্ষা,

অনন্যোপায় আমি অসহায়মহাশয়,কর অপেক্ষা।

বিস্মিত বুঝি পরমেশ্বরকহিলেন হে পুত্র,

তোমার দুয়ারে দাঁড়ায়ে দেবতানহে উপেক্ষা পাত্র।

হেরিবার তরে যাঁহারে ব্যাকুল মর্ত্যবাসীরা ভবে,

সেই পরমেশ্বরে কহিতেছ কিনা অপেক্ষা কর এবে !

জনক জননী নিদ্রামগ্নপদসেবা রত আমি,

কিমতে তাহার অন্যথা করিমার্জনা কর স্বামী।

নিদ্রাভঙ্গ হইলে দোঁহার অর্গল দিব খুলি’,

সাদরে আনিব গৃহ অন্দরেলভিব চরণধূলি।

তাঁহাদের সেবাকার্যের হেতু অর্জিত মোর পুণ্য,

সেই পুণ্যেই তব আগমনঅধম আজিকে ধন্য।

তথাপি সেই পিতামাতা সেবা কেমনে করিব হেলা,

মার্জনা করখুলিব দুয়ার কল্য ভোরের বেলা।

যুবার বাক্যে পরমেশ্বর আপ্লুত অতিশয়,

উদ্ভাসিত গেহ অন্দরে স্বয়ং জ্যোতির্ময়।

দেব দরশনে শিহরণ জাগে যুবকের তনুমনে,

নিদ্রাভঙ্গে জনক জননী লুটায় তাঁহার চরণে।

দেবতা কহেনধন্য যুবক ধন্য তোমার ভক্তি,

আশীষ দিলেম নি:সীম রবে তব এই প্রাণশক্তি।

বুঝিলে কি কেহ এই কাহিনীর কিইবা সত্যসার !

মাতাপিতা প্রতি ভক্তির মাঝে লভিবে পুণ্য অপার।

মহাগুরু দোঁহা এই জীবনের তাঁহারা যে বটবৃক্ষ,

তাঁহাদের সেবা ঈশ্বর সেবা পরম প্রাপ্তি মোক্ষ।

জনক জননী সন্তান পথে সতত আলোক দিশারী,

কাহিনীর যুবকের পথ হও সবে অনুসারী।

গল্প যদিও তথাপি জানিবে তাহাই পরম সত্য,

পিতামাতা যেন কাহারো জীবনে কভুই না হন ব্রাত্য।

পদধূলি লয়ে তাঁহাদের কর দিনের সূচনা নিত্য,

আশীষ দোঁহার সন্তান প্রাণে জানিবে পরম বিত্ত।

তাঁহাদের দোষত্রুটির বিচারে হইও না কভু ক্লিন্ন,

কাব্যের সার বুঝিলে পাঠক কবির সৃষ্টি ধন্য।

——————————————————

     স্বপন চক্রবর্তী

0

Publication author

1
একটি বহুজাতিক সংস্থায় প্রবন্ধক পদে কর্মরত ছিলাম। ২০১৭ সালে ৬০ বছর বয়সে অবসর নিয়েছি । এখন কবিতা ও গল্প লেখা আমার অবসরের সাথী।
Comments: 0Publics: 25Registration: 26-08-2020
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।