ধিক্কার
খেটে খায়,মানে মজদুর,ওই দিন এনে দিন খাওয়া লোক
ঘুটঘুটে আঁধার ঘরে, ঘরের ভিতরে ঢোকে না আলোক
ঘরেও আঁধার,জীবনেও আঁধার–দিন তার কাটে কোনোমতে
শুনলাম সদ্য এই লোকটা না কি মরেছে চলমান দাঙ্গাতে!
শুনে মুখ হাঁ,স্তব্ধ শীতল রক্তে ভাবি সারাদিন সারারাত
কার ধর্ম কে করিল রক্ষা যে দিল এই নির্মম অন্ধ আঘাত
ধর্মান্ধ এই দুনিয়ার ‘পরে। এ কি ছিল কোনো ধর্মের বাধা?
আসলে পৃথিবী হারিয়েছে ফেরার পথ,আর ধর্ম গোলকধাঁধা।
দাঙ্গা এখনো থামেনি অবশ্য,রাস্তাতে চলছে সেই খুনোখুনি
শহর জুড়ে কার্ফু জারি,ভীতু কবিতাকর্মী,ঘরেতে প্রমাদ গুনি
ছাদের উপরেও উঠি না আর,জল না পেয়ে মরেছে গোলাপ
মরার আগে জানি না গোলাপ,বিলাপ করেছে না প্রলাপ
বকেছে কে জানে কখন কোন ভাষায়।
তবে এ দাঙ্গা কখনো বিলাপ করে না,দাঙ্গা শুধু প্রলাপই বকে
মানুষ কি তবে ধর্মের নামে পাশবিকতা দেখায় মানুষকে
জানি না ,মানুষ মানুষকে মারে অহংকারে না মরার অধিকারে
তবে কি যুগ যুগ ধর্ম বাঁচে অসহায় যারা তাদের হত্যা করে?
কবির কোনো ধর্ম নাই, বলেছি কতবার, শোনে না বসুন্ধরা
এ দাঙ্গাতে তাই ঘরবন্দী সবাই,ভয়ে আছি আমরা কবিরা
কবিতা দিয়ে দাঙ্গা যায় না থামানো,শুধু ওই দাঙ্গার ‘পরে
কবিরা শুধু লিখতে পারে শোকগাথা মৃতদেহ লক্ষ্য করে।
বহুবার বহু আগুন জ্বলেছে,সভ্যতা প্রতিমুহূর্তে পুড়তে চায়
জানি না আমরা কেন অন্তর হতে এত দ্রুত সাড়া দিতে চাই
সভ্যতা জুড়ে ছড়াতে নির্মমতা।কখনো কোনো সাহসী শিশু
জন্মে যদি থাকে,তারও মাথা কেটেছে ধর্ম,হয়তো কোনো যীশু
আর বেঁচে নেই,যুগ যুগ সেই শোকে কবিরা কেঁদেছে কবিতাতে
কি ভাবে ছড়ালো দাঙ্গা বেশিরভাগ লোকেরই জানা নাই
কি ভাবে থামবে দাঙ্গা কেউ খুঁজে পায় না কোনো উপায়
বিশ্বাসীরা হারিয়েছে বিশ্বাস,বুঝেছে মানুষকে নেই ভরসা
চলছে না দাঙ্গাতে আর আগের মতো সহৃদয় সেই মেলামেশা।
রাস্তাতে গলি আছে,তাই হয়তো অলিতে-গলিতে ঢুকে পড়ে
সবাই বাঁচতে চায়। মুখোমুখি কেউ কি কাউকে বিশ্বাস করে
চলমান দাঙ্গাতে মুখোমুখি হলে? আত্মরক্ষা বা আক্রমণ
দুটোতেই অস্ত্র চলে – কুকুরের মতো মানুষের নির্মম মরণ
চেনা যায় না চেনা পৃথিবীকে,পৃথিবী সেই অচেনাই থাকে
এই দাঙ্গাতে যাবে না ধর্ষিতা বলা দাঙ্গা রাতের ধর্ষিতাকে
যেখানে মানুষ নিচ্ছে মানুষের গর্দান,ধর্ষণ তো সামান্য ঘটনা
এ সত্য ধর্ষিতাও জানে,তাই দাঙ্গা থামলেও দেখো সে যাবে না
আদালত।
কিন্তু ওই যে দিন এনে দিন খাওয়া লোকটা মরলো,কি
হবে ওর?না কি সংসার বাঁচাতে ওর বউ বনবে জোনাকি!
দাঙ্গা কত জোনাকি বানায়,দাঙ্গার কাছে নেই তার হিসাব
দাঙ্গা শুধু মারতে জানে,জানে না দিতে মারার জবাব।
অথচ এই শহরটাই দাঙ্গা ছড়ানোর আগে ছিল এত মানবিক
পথ খুঁজে নিত যার তার মুখে পথ হারানো পথক্লান্ত পথিক
দু-দন্ড আশ্রয় পেত,পেত জল,ক্ষুধার খাবার যার তার কাছে
আজ দাঙ্গাতে সবাই সবার থেকে এক আলোকবর্ষ দূরে সরেছে
লোকটা নিহত, বউটা জোনাকি – কেমন ধর্মরক্ষা জানি না
দাঙ্গা থামে,আবার ধর্মে মাতে মানুষ,ধর্ম বিদায় নেয় না
ধর্ম যুগ যুগ করেছে অন্যায়, কেড়েছে কত অসহায় প্রাণ
ধর্ম কখনো দেয়নি মানুষকে বাঁচার অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান।
যে ধর্ম ধর্ষিতা বানায়,অনাথ বানায়, এ রাতে করিয়া চিৎকার
যদি গর্দান নাও গর্দান দেবো,তবু সে ধর্মকে জানাই ধিক্কার।