বেকারের বিকার
বেকারের বিকার
তোমরা আমাকে কি করতে বলো?
কি বা আর করতে পারি আমি?
চাকরিটা হয় হয়, হতে হতে হয় না।
মাঝখানে যাতায়াত খরচাটা গচ্চা যায় ।
ডিমলার পাগলটার কথাই ঠিক!
পাগলটা বলেছিল,”চাকরী পেতে
তিনটা যোগ্যতার ’স’ লাগে”।
সার্টিফিকেট, সার্টিফাই এবং সার্টিফিস।
আমার তো কেবল প্রথমটাই আছে।
তা শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে তো আর চাকরি হয়না।
বাড়তি কিছু ডিগ্রী, ডিপ্লোমা, কম্পিউটিং এবং
সাথে আরও বেশ কিছু লাগে…………………….
এদেশে শুকনো মুখে তো আর চিড়ে ভিজেনা।
চাকরি না হলে আমি কি করতে পারি বলো?
এক কাপ চা চাইতেই তুমি হেড়ে গলায় ঝেড়ে দিলে।
শুনিয়ে দিলে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ।
বললে, ’রুজিহীনদের রুচিশীল হতে হয়না’।
এক পয়সা রোজগার নেই আবার চা……..।
ও হ্যাঁ লাকড়ি নেই। কুড়ালটা নিয়ে কাঠের গুড়িটা
আর কটা বাঁশের মুড়ো ফাঁড়িযে দিও। নইলে…..
দুপুরে চুলো জ্বলবেনা কিন্তু; হুঁ! বলে দিলাম।
কাঠের গুড়িটা ফাড়তে বলে যে-
আমার হৃদয়টাই গুড়িয়ে দিলে প্রিয়তমা।
একবারও ভাবলে না বাতের ব্যথাটা দিন দিন….
না থাক; কে শোনে কার কথা।
চাকরি না হলে আমি কি করতে পারি?
রাস্তার মোড়ে গিয়ে পত্রিকাটা দেখবো ভাবছি
ওমনি মা ডেকে বললো,”গাছে উঠে ক’টা ডাল কেটে দেতো”।
বেশ রোদ যাচ্ছে; শীতের আগেই শুকনো কাঠ লাগবে।
হাঁপানির দাপানিটা বাড়ছে।
কি আর করা? মায়ের আদেশ।
ডাল কেটে দিয়ে মোড়ের দিকে এগুতেই দেখি,
বড় ছেলেটা কোথাও যাচ্ছে।
ডাক দিলাম।
বাবু যাচ্ছ কোথায়?
দোকানে।
কেন?
তোমাকে বলে লাভ কি? একটা ডিম অথবা..
একটা চকলেটও তো কিনে দিতে পার না।
মিমিরা দামী টফি, চুইংগাম, কিটক্যাট কত কিছু খাচ্ছে।
কতদিন হলো আমি একটা ললিপপও মুখে দিতে পারিনি।
“দুঃখ, তোমার কত বড় দপদপি
দেখাও দেখি বাপ!
বেকার বাবার দুঃখ গভীর
আছে কি কোন মাপ”?
চাকরি না হলে আমি কি করতে পারি?
ঘুমে-ঘোরে শুয়ে-বসে
কত আর কাটে দিন, কাটে কত রাত;
আর কত অলস দিনাতিপাত।
রাত করে বাড়ি ফিরে দেখি
পোষা কুত্তাটাও অচেনা।
আমাকে দেখে পরিহাস করে।
ঘেউ ঘেউ ঘেউ ….
ব্যথাতুর আমার আমিকে
আমি ছাড়া আর বুঝলো নাতো কেউ।
কুত্তার হাক ডাক শুনে
পাশের বাড়ির খইটু কাকা-
সেও ভেংচি কাটে,”
ওবাড়ির নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এলো”।
তাই খুব বেশী দরকার না হলে
অতি সন্তর্পণে সর্পিল পথে হেঁটে
আপন জনদের এড়িয়ে চলি।
ঠিক আমি লজ্জা পাবো এই ভেবে নয়;
ওরা বিব্রতবোধ করে। কী জানি?
টাকা পয়সা ধার চেয়ে বসি কি না?
সব কিছু শুনেও না শুনার ভান করে
অভিনয় করার তালিম দিতাম নিজেকেই।
চাকরি না হলে আমি কি করতে পারি?
করোনাকালীন বিভীষিকাময় বেকারত্ব
যেমন ঘরে ফেরা মানুষদের স্তব্ধ করেছে;
তেমনি আমি নিজের উপরও নিজেই ক্ষুব্ধ।
জন্মই যেন আমার আজন্ম পাপ?
বেকারত্বের বিকার বয়ে বেড়াচ্ছি,
শঙ্কায় কিংবা আশঙ্কায়,
কর্মহীনতার দুর্দমনীয় অভিশাপ।