আত্মা যা বলে
তিনিই আমার জীবনের সত্যি উথালপাথাল, ভালোবাসার মতো ভালোবাসা যা হয়ে গেলে শরীর, মন তো পরের কথা, এমন কী আত্মারও সব আপসোস অপ্রয়োজনীয় বস্তুর মতো আপনাআপনি খসে পড়ে যায়। অন্যদের জন্য কলরব জেলা সম্পাদক। কিন্তু তিনি আমার ভেতরের বাসিন্দা, হৃদনগরের মানুষ। আমার জন্য কণা কণা আনন্দের সমাহার। কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে আমাদের অফিসে আসতেন। গাল দুটো সব সময়ে পরিষ্কার, মুখে ঝলমলে হাসি, দীর্ঘদেহী, সুপুরুষ কমরেড। দলের সম্পদ, আমার জন্য সবচেয়ে দামী সম্পত্তি’র অধিক। কাজ করতে করতে ভাবতাম কতক্ষণে তাঁর হাসিমুখ দেখতে পাব। তাঁর গমগমে গলা শোনার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। ওহ্! তিনি এলে সে কী আনন্দ আমার! কত অজুহাত করেই না পাশের ঘরটায় ছুটে যেতাম যেখানে সংবাদবাহকেরা বসতেন। সহকর্মীরা কেউ কেউ টের পেত। একটা সীমার পর আবেগ লুকনো যায় না। এতো আমার কথা। কিন্তু তিনি? যে দিন নিজের মন বুঝতে পারলেন সে দিন থেকে আমাদের অফিসে আসা কমিয়ে দিলেন। ভয় পেতেন তাঁর আবেগ লোকজনের কাছে ধরা পড়ে যাবে। আমাকে এড়িয়ে যেতেন। তাতে কী? তাঁর দৃষ্টি পড়তে আমার অসুবিধা হয়নি।
এক দিন কথা হল। তারপরে ভীড় এবং সর্বত্রগামী মৌসুমী বাতাসের ঝাপটা এড়িয়ে ক্কচিৎ কদাচিৎ কথা হ’ত। মাসে দুয়েকবার স্বল্পকালীন দূরভাষ , একটু বার্তা দেওয়াদেওয়ি।
এক সময়ে কাল আমাদের আলাদা করে দিল। এখন ভুল করেও দেখা হয় না। প্রায় দু’ বছর তাঁকে দেখিনি। কী ভীষণ কষ্ট হয়। মৌ বিরহে তেতো হয়ে গিয়েছে। কত কথা শুনি! অনেক দিন ধরেই নাছোড়বান্দা একটা কাঁকড়া তাঁর দিকে এগোচ্ছে। আমার ভয় লাগে। কাউকে বলতে পারি না। কবে আবার দেখতে পাব তাও জানি না। শেষ দিনটার কথা কেউ বলতে পারে না। এমনিতেও আমাদের মধ্যে প্রায় দু’টি দশকের ব্যবধান। তবে কে আগে চলে যাব বলা যায় না। মৃত্যু অত সহজবোধ্য শিকারী নয়। আমি যদি আগে যাই তাহলে ওই পারে গিয়ে সমস্ত আগ্রহ নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করব। এখানে সমস্ত বিরহ, মরজীবনের পরে অনন্ত ভালোবাসার প্রবাহ। দেহ ফুরোবার পর সেখানে আমাদের দু’টি আত্মার আনন্দ সহবাস হবে।
Subscribe
Login
0 Comments
Oldest