কৈলাসে বিলাস

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

জানো কি সেদিন সাত সকালে কৈলাসে  মহাকাণ্ড!

ভোলা মহেশ ধমকে ওঠেনসব কটা অপোগণ্ড।

বকছ কেনকি হয়েছেদেবী আসেন ছুটে,

ভোরের বেলার শরীরচর্চা গেলই বুঝি টুটে।

বলেন বাবাশুনেছ কি ছেলেমেয়ের কথা,

তোমার জন্যে আজকে ওদের বিগড়ে গেছে মাথা।

একা একাই মর্ত্যে যাবে চার ভাইবোনে,

ফুটবল আর ক্রিকেট নাকি ওদের সদাই টানে।

একটা গোলায় বাইশজনে করছে লাথালাথি,

বুঝতে নারি তাই নিয়ে কিসের মাতামাতি!

আর ক্রিকেট খেলায় মত্ত থাকে যত রাজ্যের কুঁড়ে,

উঠল বাই মর্ত্যে যাবে তাই দেখার তরে।

ওদের নিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার বোঝো ঠ্যালা,

মোর নিষেধ শুনলে আগে হত কি এমন জ্বালা !

ভোলানাথের কথা শুনে মহামায়ার রোষ,

গর্জে ওঠেনবুঝলাম হায় সবই কপাল দোষ,

ছেলেমেয়ের এহেন হালদায়ী হলেম আমি,

উনি ধোয়া তুলসীপাতাশ্মশানবাসী স্বামী।

কোন্ ভরসায় ওদের আমি রাখব তোমার কাছে !

নেশার ঝোঁকে তোমার কি আর জ্ঞানগম্যি আছে !

আচ্ছা বেশ বাপের বাড়ি এবার যাব একা,

কত ধানে কতই চাল,বুঝবে তখন খোকা।

যেই না বলা মহেশ্বর অমনি কুপোকাত,

দশভুজার এক চালেই শিবশংকর মাত।

তোষামোদ করেন তিনি মহামায়ার তরে,

ঘাট হয়েছে,চাইছি ক্ষমাকহেন করজোড়ে।

তোমায় ছাড়া আমি হলেম ফণী মণিহারা,

নন্দী ভৃঙ্গী ওরা দুজন পাজীর পাঝাড়া।

মোর মাথাটি করল গরম ওরাই ভোরের বেলা,

মর্ত্যে নাকি ছেলেমেয়ে দেখতে যাবে খেলা।

ওদের কথায় আমি মোটেই করছি না বিশ্বাস,

দুটোই ঘোর মিথ্যাবাদীনচ্ছার,বদমাশ।

মহামায়ার মুখে এবার মিটিমিটি হাসি,

ভোলানাথের প্রাণে যেন বাজায় মোহনবাঁশি।

বলেন দেবীঠিক শুনেছনয়কো মিথ্যে মোটে,

খেলা দেখার জন্যে ওদের মনটা এখন ছোটে।

বলছোটা কিশুধান শিবব্যাপারটা সব সত্যি !

ধরায় যাবে একাএকাওরা সব একরত্তি !

ভাবছ কেন মিছামিছিপাচ্ছ কেন ভয় !

বলেন মাহাতের কাছেই আছে যখন উপায় !

যার ফলে মরবে সাপভাঙবে না তো লাঠি,

ওরা ঘুরুক ডালে ডালেআমি পাতায় হাঁটি।

কি উপায়জানতে ভারী উৎসুক হন ভোলা,

আনছি টিভি রঙিন হেথাদেখবে সবাই খেলা।

পক্ষীরাজ গেছে উড়ে কালকে আমেরিকা,

ছেলেমেয়ে ওদের তুমি কোরো না বকাঝকা।

মর্ত্যধামের সেরা টিভি আসছে কৈলাসে।

সংগে আছে টাটার যাদুঅনুষ্ঠান সব আসে।

দেশবিদেশের অনুষ্ঠান দেখবে যেমন খুশী,

ওদের মুখের হাসির থেকে আর কি চাই বেশী !

সব শুনে মহাদেবের চিন্তা হল দূর,

পাশের ঘরে ছেলেমেয়ে সব করছিল ঘুরঘুর।

হৈ চৈ করল সবেআনন্দেরই বাণ,

সেরা টিভি নিয়ে হাজির পক্ষীরাজ যান।

তোমরা যদি কখনো কেউ যাও গো কৈলাসে,

দেখবে টিভি আছে রাখা মহেশ্বরের পাশে।

শ্মশান ঘোরার ঝোঁকটি বাবার গেছেই এখন টুটে,

ঘরের থেকে বাইরে যেতে চান না তিনি মোটে।

কল্কে মুখে চশমা চোখেবোকা বাক্সের টানে,

মর্ত্যবাসীর আকুল ডাক ঢুকছে না আর কানে।

—————————————————

        স্বপন চক্রবর্তী

1

Publication author

1
একটি বহুজাতিক সংস্থায় প্রবন্ধক পদে কর্মরত ছিলাম। ২০১৭ সালে ৬০ বছর বয়সে অবসর নিয়েছি । এখন কবিতা ও গল্প লেখা আমার অবসরের সাথী।
Comments: 0Publics: 25Registration: 26-08-2020
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

আপনি কি গল্প পড়তে ও লিখতে ভালোবাসেন? তবে বাংলা গল্প এবং অডিও স্টোরি প্রকাশ করার জন্য আজ‌ই যুক্ত হন আমাদের নতুন গল্পের সাইটে