চেনা মুখে
পৃথিবীর মৃত পাহাড়ে বাস করে
আমার ‘শূন্য’ হাত ভরে গেছে অন্ধকারে,
নিশিরাতে সূর্য নক্ষত্রের নিকট হতে
নব-নব বিদায়ের প্রতীকি জাগে।
সে অনেক জেগে থাকা রাতের কথা
ঘুমহীন চোখে দাঁড়িয়ে বারান্দার চেয়ারে
সব চেয়ে ঢের বেশি প্রিয়
জন্ম-জন্মান্তের স্থিরময় চেতনা।
র’য়ে গেছে বহুদূর অজানা বাকী
কোন্ আকাশের সীমান্তের প্রাচীর ছুঁয়ে
আমার চোখের নিশানার মৃত গলি
শহরের ময়দানে জন্মাবার তরে-
ঐশী কাল জেগে এখানে কাতরের বেশে
অগ্রসরে কল্পনার মেঘ-মদিনার যুগনে।
তবুও নিজেকে সত্য বলে প্রমাণিত করলে
যুগে যুগে ধ্বংস হবে তরুণতা প্রেমে;
চেনা মুখে জ্বলে ওঠে নবীনের হৃদয়-
প্রেমিকেরা আজ হারিয়ে গেছে একে একে
প্রাক্তন প্রেমিকাদের চেনা মুখে;-
তবুও মধ্যম শিথিলতা নীল আকাশের দিকে।
কোলাহল পৃথিবীর অমৃতা সুরে
অন্তবিহীন শস্যের ঘ্রাণে শুকিয়েছে হৃদয়
মুখোমুখি প্রখর কল্পনার দেয়ালে
অফুরাণ প্রেমের সংকল্প চোখের আড়ালে,
কয়েক যুগ পরে সমস্ত প্রেমিকেরা হারিয়ে গেছে;
হলুদ হেমন্ত ডেকেছিল ফাগুনের উষ্ণ ফুলে।
আজ তাঁরা চলে গেছে বহুদূরে
র’য়ে গেছে কঙ্কালের রাশি
সেখানে মরুভূমির উষ্ণ বালি
নির্মল বাতাস ব’য়ে চলে আনমনে।
একবার মৃত্যুর আগে শেষ ঋতু আসে
পৃথিবীতে সেইদিন মনে হয় বেঁচে থাকি দীর্ঘদিনে,
নির্জন মাঠে ফসলের আল ধরে বেড়ে ওঠা
বুঝেছি আমি বহুদিনে , সেটাই ছিল পরম পাওয়া।
আমরা যারা বহু বছর পর হেঁটেছি নির্জন পথে
কুয়াশা ঘেরা নরম ঘাসের উপরে শিশির বিন্দুতে
কিংবা শিউলি ফুল কুড়ানো ভোরের সকালে
শালিক পাখির দিনের সূচনাকালে।
কেবলি অবিনশ্বর ক্ষমতা নিয়ে
সূর্যের পানে চেয়ে থেকে-
মলিন হয়েছে জীবন, তবুও তো শিখেছি কিছু;
চারিদিকে দ্বন্দ্ব হিংসা শত্রুর আক্রমণে
পালিয়েছি ঘর ছেড়ে অন্যখানে;
তবুও সবাই বেঁচে থাকতে চাই
কেউ পাই আর কেউ বা অকালেই হারায়!
গল্প লিখে সাদা হিমের দেশে।
আমি মৃত মানুষের চেনা মুখে দেখেছি স্বপ্ন
চৈত্রের ভরা উষ্ণ দুপুরে জ্বলজ্বল করে
রাত্রি নক্ষত্র জ্যোৎস্নার প্রহরের মতো।
আগামী নবদিগন্তের মানুষের হৃদয়ে
ভালোবাসা বলতে কিছু থাকবে না জানি
তবুও করুণ ইতিহাস প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে
উত্তর খুঁজে যায় অস্তগামী সূর্যের গোধূলি লগ্নে।
শতাব্দীর আদিকাল হতে যতদূর এগিয়ে কাহিনীর প্রান্তে
মানুষের দাবি পাহাড়ের নীচে
চাপা থাকে বহুকাল অজানা ক্ষণে ।
মৃত্যুর উপত্যকা সত্যের বাণী নিয়ে আসে
বর্ষার জলের ঢেউ-এ।
জানি আমি কোথাও ভয় আছে
আবার কোথাও বা নেই-
বৃষ্টির দিনে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে
চলে যায় হিমালয় পর্বতে।
কবেকার স্বাধীন দেশে
পা রেখেছি এই ভুবনে
রক্তমাখা বিপ্লবীর ঝাঁঝরা বুকে
বুলেটের গহ্বর এখনো জানে।
ইতিহাস কে জানতে গিয়ে
আজকের মানুষের কাছে
বারে বারে লাঞ্ছিত হই
শুধুমাত্র মনকে ভালোবাসি বলে।
এই পৃথিবীতে কয়েক দিন বেঁচে আছি
হয়তো কঠিন নতুবা সরল রূপে;
তবুও সুন্দর প্রকৃতির নীরবতা
দেখতে চেয়েছি আজীবনে!
এটাও জানি একদিন মৃত্যু হবে
ক্ষ’য় হবে সমস্ত কিছু।
ধংস হবে পৃথিবী
মৃত হবে সত্যময় বাণীগুলি
ভেসে যাবে নদীর জলে
আমার সমস্ত কবিতার লাইনগুলি।
মানুষ রূপে জন্মলাভ করে
আমরা হিতে হয়েছি বিপরীত;
তবুও কিছু সত্যের বাণী
বিধাতার চরণ ছুঁয়ে যায় জানি।
অচেনা দূর প্রান্তর চিনিয়ে দেই
নতুনেরা এসে বন্ধুত্বে বন্ধুত্বে:-
সভ্যতার হাতের মুঠোয় মুক্তি নিয়ে
রাজপ্রাসাদ ছেড়ে মাটির ঘরে।
ইতালি, পর্তুগাল ,স্পেন নাম নিয়ে
মিশরের পিরামিড কেউ কি আনতে পারে কিনে!!
সেখানে গিয়ে মমিরূপে সমাধি হয়ে
সাহারা মরুভূমি চোখের বালি একপলকে।
আজকাল বহুদিন পর
রাত জেগে নিভে গেলে বাতি
উড়ে গেছে নীল চিঠিগুলি
মনুমেন্টের আকাশের সীমানায়।
চেনা মুখে অচেনা পৃথিবী
দেখা যায় বারে বারে
হাজার বছর ধরে
প্রান্তরের বুকে।।
২৯/০৮/২০২১