এদিকটায় আমি অনেকদিন যাবত থাকি।
জীর্ণ শীর্ণ পুরানো, স্যাঁতসেঁতে একটা বাড়ী,
এখান থেকে আকাশ দেখা যায় না, আমার প্রয়োজনও নেই।
দিন আনি দিন খাই, ঘর-সংসারের ঠিক নাই,
এত বিলাসিতার সময় কোথায়?

দূরে একটা পাকুড় গাছ, চোখের সামনে অযত্নে বড় হয়।
এ এলাকায় ওই আমার একমাত্র পরিচিত।
সবকিছু ঠিকঠাক ই ছিল, হঠাৎ উন্নয়ন শুরু হল।
নতুন রাস্তার পর বিদ্যুতের লাইন বসল।

পাতার ফাঁক দিয়ে কত ভোল্টের  চিকন চিকন তার,
ঠিক পেন্সিলের আঁকা ছোট বেলার রুল টানা খাতার মত।

ক’দিন পরপর খুবই আগ্রহ নিয়ে,
বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন বীর দর্পে দাঁড়িয়ে থাকা,
গাছটার ডালপালা আর মাথাটা কেটে দিত।

আমি আলস্য ভরা ক্লান্ত চোখ নিয়ে,
দূরে দাঁড়িয়ে দেখি। নিজেকে পানির নীচে শ্যাওলার মত মনে হয়। দিব্যি বেঁচে আছি কিন্তু কেউ দেখছে না।

ছোট বেলায় শিখেছিলাম, গাছেরও নাকি প্রাণ আছে।
তাচ্ছিল্যে র হাসি দিয়ে ভাবি, আমারও তো আছে।
গাছ দের মাথা কাটা গেলেও, তারা সব অগ্রাহ্য করে
আবার ডালপালা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, এমন ভাব যেন কিছুই হয়নি।
আচ্ছা মানুষের মাথা কাটা গেলে , তারা মরে যায় কেন?
কেন আবার ডালপালা ছড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় না?
অবশ্য অনেক কে বলতে শুনি ” লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেছে”
আশেপাশে শীৎকার করে আবার লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করে।
গাছ দের কি লজ্জা আছে?
তারা চিৎকার করে না কেন?

লেখক, কলামিস্ট,
– কে এন এন লিংকু
knnlinku (at) gmail.com