আমিই সেই নারী
আমার জন্ম ইতিহাস হয়তো অভিশাপ
নীল আকাশের বুকে কালো মেঘের ছায়া
আমার স্বপ্নগুলো ছেঁড়া পাতায় কাটাকুটি খেলা
হয়তো ছুঁড়ে ফেলতে হয় আধপোড়া সিগারেটের মতো ….
আমার জন্মদাত্রী মাকেও হতে হয় লাঞ্ছিতা
আমার পরিচয় , আমি নারী ।
আমি সেই নারী , যার জন্য —
পুরুষের বাঁকা চোখের তির্যক চাউনি
নিঝুম রাতে লালসার থাবা
আমার সীমানা থেমে গেছে বাড়ির শেষ চৌকাঠে
সংস্কারের চাপে আজ আমি অশুচি , অপবিত্রা
আমিই সেই নারী , যাকে বস্তির ঘর থেকে
রাতের অন্ধকারে তুলে–
ক্ষুধার্ত কামনার আগুনে দগ্ধ দেহটা পাওয়া যায়
পোড়ো বাড়ির অন্দরে ।
রাজনৈতিক দাদা থেকে পুলিশ একমুখ হেসে কয়
“আরে! মেয়েটা দুশ্চরিত্রা ! ”
হায়রে সমাজ ! এরপরেও আমার মুখে অ্যাসিড !
সবটাই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ।
আমি তো সেই কুঁড়ি , ফুলের মতো বিকশিত হবার
আগে – সব শেষ !
আমি সেই নির্ভয়া , আমি সেই দামিনী , আমি সেই মনীষা , আমিই সেই আসিফার মতো ছোট্ট শিশু —
আমি সেই পথের ধারে পাগলী মেয়েটা , গায়ে নোংরা পোশাক –
অন্ধকারে যৌন লালসার খিদে মেটাতে –
আমিই হলাম ” দুশ্চরিত্রা ”
আমিই সেই নারী , যাকে শোভাবাজারের অন্ধকার গলিতে আজও দেখা যায় –
কেন জানেন ? আপনাদের মনোরঞ্জনের জন্য
অথচ , আমিই ” বেশ্যা ” আমিই ” দুশ্চরিত্রা ”
আমিই সেই নারী , কলেজ ক্যান্টিনের সস্তা প্রেমে
নেশায় বুঁদ হয়ে আমায় গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করেন-
আবার , আমায় না পেয়ে হাতের শিরা কেটে
আত্নহত্যারও চেষ্টা করেন ।
বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে আমাকে বেশামাল করে
মস্তি করেন অথচ –
কলেজ ক্যান্টিনে রটিয়ে দেন – আমি দুশ্চরিত্রা ।
আমিই সেই নারী , গরীব বাবার স্বপ্নালু চোখে
ভবিষ্যতের আই পি এস।
অলিম্পিকের মাঠ থেকে পদক নিয়ে আসা —
মেরী কম কিংবা ঝুলন গোস্বামী ।
নারী আন্দোলনের ভূমিকায় এগিয়ে চলা একটি মুখ , আগামীর প্রতিধ্বনি — স্বাতী মালিওয়াল ।
আমিই সেই নারী —
ট্রেন চালাই , প্লেন চালাই , আবার সংসারের সব কাজ সামলেও ট্রাক চালাই –
খাঁকি পোশাকে যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যাই দেশের জন্য
আমিই সেই নারী , যাকে আপনারা লাল পাড় সাদা শাড়িতে মায়ের মন্দিরে দেখেন –
প্রতিশোধের আগুন আমার চোখে
উচ্চারিত হয় সেই মহামন্ত্র —
“সৃষ্টি স্থিতি বিনাশনম শক্তিভূতে সনাতনী
গুনাশ্রয়ে গুনময়ে নারায়ণী নমোহস্তুতে । ”
আমিই সেই নারী , যার জন্য –
শহর থেকে গ্ৰাম – আসমুদ্র হিমাচল
নতুন সংসার , নতুন আশার আলো
ফুলশয্যার রাতে কামনার আগুনে
প্রথম পুরুষের সান্নিধ্য ,ভালোবাসা পাওয়া
জরায়ূর অন্ধকারে নিজের আত্মজকে স্বীকার করে
আগামীর অঙ্কুরিত বীজ –
কিন্তু আমি , আজও অবহেলিত —
কৈশোরে বাবা মায়ের কাছে,
যৌবনে স্বামীর কাছে,
বার্ধক্যে সন্তানের কাছে ,
একমুঠো কাঙ্খিত ভালোবাসার জন্য
আমিই সেই নারী —
আজও অপরাজেয়