আরুণির গুরুভক্তি
আলপথ ধরি’ আরুণি ধাবিত
সুতীব্র বারিধারা,
কেমনে রুধিবে এই বারিবেগ
কিশোরটি দিশাহারা।
গুরু ধৌম্যের শিষ্য আরুণি
অসীম কর্মনিষ্ঠা,
এস মোরা আজি করি সন্ধান
পুরাণের সেই পৃষ্ঠা।
গুরুর জমির আল খণ্ডিত
প্রবল বর্ষা হেতু,
কেমনে সেথায় বাঁধিবে আরুণি
রক্ষণকারী সেতু !
কত প্রচেষ্টা, কত উদ্যম
সকলি ব্যর্থকাম,
সারাদিন বীত তথাপি অটল
আরুণির সংগ্রাম।
যে কোন মূল্যে বাঁধিবেই সেতু
জীবন রাখিয়া বাজী,
কিন্তু প্রবল বরিষণ বুঝি
বিধাতার কারসাজী।
অবশেষে কোন উপায় না হেরি’
কিশোর ধৌম্য–শিষ্য,
সেতুবন্ধনে নিজ বরতনু
করে সে তুচ্ছ নি:স্ব।
আলের উপর করিল শয়ান
বারিবেগ হয় রুদ্ধ,
গুরু দায়িত্ব পালনে সফল
আপন কর্মে সিদ্ধ।
গুরুগৃহে আছে সকল শিষ্য
আরুণি আসেনি ফিরি’
শঙ্খধ্বনি কহে ঘরে ঘরে
“রাত্রির নাহি দেরী”।
আচার্যদেব উদ্বেগে অতি
অন্তরে বুঝি খেদ,
চলিলেন দুই শিষ্যের সাথে
উপমন্যু ও বেদ।
চলেন ধৌম্য জমিটির পানে
আরুণির সন্ধানে,
ডাকেন তাহারে উচ্চৈস্বরে,
একসাথে তিনজনে।
নিশার আঁধার চৌদিক ছায়ে
দৃষ্টির বিভ্রম,
বরুণদেবের ক্লান্ত শরীর
বরিষণ উপশম।
শিষ্য কর্ণে পশে অবশেষে
আচার্য্য আহ্বান,
রুদ্ধ তখন বারিবেগ ধারা,
আরুণি দীপ্যমান।
বাহিরিল সে গুরুর সকাশে
কহিল সকল কথা,
আপ্লুত গুরু ধৌম্যাচার্য্য
“ অমর রবে এ গাথা।”
“সেতুবন্ধনি’ কেদারখন্ডে
হইয়াছ উত্থিত,
উদ্দালক নব নামে তুমি
হও এবে আলোকিত।”
“তোমার সকল মনস্কাম
পূরিবেই শ্রেয়োলাভে,
বেদ, পুরাণ ও ধর্মশাস্ত্র
রবে হৃদে সমভাবে।”
তাঁহার আশীষে পাঠের অন্তে
উদ্দালকের নিশান,
করিল বিজয় ভারতবর্ষ
জ্ঞানের আলোকে স্নান।
কালক্রমে লভিলেন তিনি
শাস্তার মর্যাদা,
“জীবন মৃত্যু পরম সত্য
উপনিষদের সুধা।”
তাঁহার এহেন তত্ব আজিও
শ্বাশ্বত অম্লান,
এস করি সবে ভট্ট দিবসে
আরুণির জয়গান।
——————————————————————