কাজে আসবে তার ঠোঙা বানাবার

প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন :--👍

Loading

কি বললে হে পথিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র ল’য়ে –
সরকারি চাকুরির পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে –
হাঁপিয়ে এই ফুটপাতে বসে বাদাম চিবাচ্ছো।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে গোল্ডেন পেয়েছো
হাজার হাজার দরখাস্ত করেছো চাকুরির
ভাইবাতে-ও ডেকে ছিলো তোমায়।
তবে চাকুরিটা হয়নি ক্যানো?
বেয়াদবি ট্যায়াদবি করে মান করেছিলে হেয়।
না ভাই, কি বলবো দুঃখের কথা
আমাকে দ্যাখে মনে হলো কে যেন হাঁড়ি ভাঙলো
ভাইবা বোর্ড কর্মকর্তাদের মাথায়
চোখ উঠলো কপালে, তাকালো ভ্রু কুঁচকে
হঠাৎ আচমকা ব’লে উঠলো-
মুখভর্তি এক মুষ্টি দাঁড়ি —
মিছিল ল’য়ে দাঁড়াও নাকি জামাত শিবিরের সারি?
মাথায় টুপি, গায়ে ধবধবে পাঞ্জাবি —
নাম-টাম আছে নাকি ভাংচুরের খাতায়?
ডাল-ভাত খেয়েছিলে নাকি কভু অন্ধকার শ্রীঘরে?
লেবাসে তো তাই ব’লে, লেবাস তো জঙ্গির সঙ্গে মিলে।
খুব নরম কণ্ঠে বললাম –
না-না স্যার, আমি রাজনীতি করিনা
স্রস্টার হুকুম পালনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি
তিন-বেলা খাবার আর পড়াশোনার খরচ- জোগাতে দু’টো টিউশনি করি
যা পাই তাতে টেনেটুনে চালিয়ে নেই।

জ্ঞান তোমার হিমালয় সম, মেধা ক্ষুরধার –
তাতে কাটবে না বাঁধার দেয়াল,ঘোর আঁধার
আছে কি সাথে তার চিরকুট?
যাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলে দিয়ে জাল ভোট।
ও-ই যে একটি কীড়ে দ্যাখতে পাচ্ছো
পুরনো কাগজগুলোর উপর দিব্যি আরামে ঘুরে-বেড়াচ্ছে
চাকুরির পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে বহু মেধাবীর মেধায় কীড়ে ধরেছে
চাকুরী না পাওয়ার হতাশায় বহু মেধাবী –
আত্মসম্মানে আত্মহত্যা করেছে।
এ জমানায় চাকুরী সোনার হরিণ —
পাতি নেতার মাথায় ঢেলে তেল –
ঘাতী নেতার মাতায় ঢালতে হবে জ্যাল
তেল-জ্যাল মিলে দ্যাখাবে তোমায় আজব খেল।

আর এক-দুশো গ্রাম বাদাম নেবো নাকি ভাই?
না ভাই থাক,
জীবনটাই বাদামের খোসার মতো হ’য়ে গেলো
কখনো বাতাসে উড়িয়ে নেই আবার কখনো মানুষে পায়ে পিষে দেয়।
যা দ্যাখলাম ভাইবা বোর্ডে
নিজের উপর নিজের ঘৃণ্যা হচ্ছে –
ক্যানো জড়ালাম না নোংরা রাজনীতিতে
অতি সহজে মিলতো চাকুরী অপনীতিতে
ঘুচাইতে পারতাম দারিদ্র্যতার ঘাটতি
বিয়েসাদীতে মিলতো সুশ্রী পাত্রী।
আজ স্যার স্যার ব’লে লোকে ঘুরতো আমার পিছু
যদি তেল মারা শিখে নিতাম মাথাটা করে নীচু
আড্ডার আসরে পেতাম বহুরুপী মানুষ
যারা সর্বময় উড়ায় রামধনুর রংয়ের স্বপ্নীল ফানুস।

নাম লিখতে না পারা ছেলেটা–
ক্লাসের পড়া না পাড়ার ভয়ে স্কুলের শেষের বেঞ্চে বসা ছাত্র-টা-ও দক্ষ খেলোয়াড় তেল-জ্যালের খেলায়।
ঘাতী নেতা কি যেন লিখে দেয় চিরকুটে –
তা দ্যাখে প্রশ্ন আসেনা বোর্ড কর্মকর্তাদের মুখে
জয়েনিং লেটার ধরিয়ে দেয় হাতে
হাসতে হাসতে ফিরে বাড়ির মুখপানে।

বাদাম বিক্রেতার পাতানো টুলে বসে
ভাবছি এই পড়ন্ত বিকেলে –
স্বতস্ফুর্ত স্বাধীনভাবে করছে বিক্রি বাদাম
কাস্টমারও লাইন ধরে আছে পেতে এক ঠোঙা বাদাম।
দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের শ্রেষ্ঠ কাগজ কাজে আসেনি আমার
বাদাম বিক্রেতাকে দিয়ে গেলাম কাগজ-
কাজে আসবে তার ঠোঙা বানাবার।

২৪/০৭/২০২২ সৌদি আরব

0

Publication author

0
মোঃ আকাইদ-উল-ইসলাম (মিটু সর্দার)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বড়মুড়া গ্রামে ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর, এক সম্ভান্ত্রশালী মুসলিম পরিবারে কবির জন্ম। কবির পিতার নাম নূরুল ইসলাম (মাষ্টার) আর পিতামহের নাম আলতাব আলী সর্দার
Comments: 0Publics: 150Registration: 02-04-2022
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

পরিচিতি বাড়াতে একে অপরের লেখায় মন্তব্য করুন। আলাপের মাধ্যমে কবিরা সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। জমিয়ে তুলুন কবিতার আড্ডা।