বুড়িটা !
পড়ন্ত বেলায় বৃদ্ধাটি ফুটপাতে শুয়ে বিড়বিড় করছিল, ফিরে আয়, খোকা
ফেলে যাস না, ফিরে আয়, হাতটা ধর নিয়ে চল, আমার বড্ডো —
শোনার মতো কেউ ছিল না, আমিও না, কেননা আমরা সবাই ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম, উন্নয়নে
ড্রেনের ধারে রোগা কুকুর বাচ্চাটা বার বার লোভী চোখে দেখছিল বুড়িটার দিকে
রাস্তায় লুটানো বুড়ির নোংরা আঁচলের গিঁট, সেটা ধরে টানছিল এদিকে ওদিকে
আহ্লাদী মুখে ঘেউ ঘেউ ডাক, শুনতে শুনতে বুড়ি কিন্তু তলিয়ে যাচ্ছিলো চেতনার অতলে।
রাস্তা দিয়ে বেশ লম্বা একটা মিছিলে তখন অনেক গর্জন মিশেছিল, উন্নয়ন চাই !
দিকে দিকে স্বচ্ছতার অভিযান, সব কিছু পরিষ্কার ঝকঝকে চাই, ঝকঝকে পরিষ্কার !
নোংরা নিয়ে দেশে, মহল্লায় বা সমাজে বা কোনো নোংরামো বরদাস্ত করা হবে না।
কারা যেন তৃতীয় বিশ্বের ক্যাবলা দেশ পেয়ে প্রচুর নোংরা করছে দেশটাকে
ব্যবস্থা না হলে কোথায় যেন কার কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে,
মিছিলের থেকে অনেক ওপরে ওঠা মুঠো হাত বেয়ে উন্নয়নের দাবি দাওয়া ছড়িয়ে পড়ছিলো,
রাস্তার ধারের মনিহারি আর চায়ের দোকানে, অলিতে গলিতে, মন্দির মসজিদে
পায়রার খোপের মতো খন্ড খন্ড বাসাবাড়ির আনাচে কানাচে ফুটপাতে,
কুকুর ছানাটা ভয়ে ভয়ে বুড়ির আঁচলের পাশে লুকিয়ে দেখছিল, কোনো আওয়াজ ছিলোনা।
কেবল, জ্ঞান অজ্ঞানের সীমানায় বুড়িটা শুয়ে নোংরা অঞ্চলে মুখ ঢেকে বিড়বিড় করে,
বলে যাচ্ছিলো, ফিরে আয়, বেটা ফিরে আয়, বেটা, আমাকে তুলে নিয়ে চল, বেটা,
আমার যে বড্ডো বাথরুম পেয়েছে, বেটা এখানে নোংরা করলে আর পরিষ্কার কে করবে !
কুকুর বাচ্চাটা ভয়ে ভয়ে বুড়ির আঁচলের পাশে লুকিয়ে দেখছিল, সেটার কোনো দাবিই ছিলোনা।