মরদ
আমি হারিয়ে গেলে আমার শিয়রে
বর্ষার বাদল ভেজা একটা কদম রেখো এসো,
আমি ভালোবাসি কদম, কদম মাটি আর মাটি ভালোবাসে আমার দেহ,
ভালোবাসার ত্রিভূজ প্রেমে দূরে দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্যের শেষ হাসি তুমি-ই হেসো।
কার্তিক মাসের মেলায় লাল শাড়ি একগাছা কাঁচের চুড়ি আর
কথা ছিল অগ্রহায়নের নতুন ধান তুলে তোমায় ঘরে তুলার।
তারপর অাবার অগ্রহায়ন ঘুরে অগ্রহায়ন এসেছে
শাড়ি আর কাঁচের চুড়ি কেনা হয়নি।
তোমাকে যখন প্রথম দেখেছি,
তুমি কাস্তে কোদালে ফসলের মাঠে ছিলে ব্যাস্ত,
মুখখানা ঢাকা ছিল সস্তায় কেনা সুতির শাড়িতে মস্ত।
আমি তোমায় না দেখেও ঘাম ঝড়ানো তেঁজ দেখেছিলাম
দেখেছিলাম মধ্যান্হে কাজল কালো শুধু নয়নখানা।
বেশ বুঝেছিলাম, বিন্নি ধানের খই আর খেজুরের এক মুঠো গুড়
দুপুরের খাওয়া না হলেও খেতে ভালোই লাগে।
বুঝেছিলাম ছন্ন ছাড়া এ জীবনে
তোমার মতো একটা বাঘিনি-ই আমার প্রয়োজন সবার আগে।
তাই বেশ কয়েকদিন পর লুকিয়ে
আড়ালে দাঁড়িয়ে তোমার হাত ধরে তোমাকেই নিয়েছিলাম চেয়ে।
তুমি কি জানি কি ভেবে
বলেছিলে, “বাবজান বললে, তবেই হবে।”
আমিও দিয়েছিলাম কথা,
যে করেই হোক তোমায় ঘরে তুলবোই,
সকালের এক সানকির পান্তা দুজনে খাবোই,
শীতের রাতে ছেড়া কাঁথায় দুজনে লেপ্টে থাকবোই।
তাই, আমি আমার ভাঙ্গা ঘরে পুরনো খুটি বদলে বরাক বাঁশের মোটা খুঁটি পুতেছিলাম
উপরে দিয়েছিলাম নতুন টিন,
শ্যামগঞ্জের বাজার থেকে ষোল টাকায় এনেছিলাম শীতলপাটি,
জোৎসা রাতে দুজনে উঠোনে বসে আকাশের তারা গুনবো আর গালে ছুঁয়াবো মাটি।
তোমায় নিয়ে নতুন একটা গানে তুলেছিলাম সুর,
বাসর রাতে তোমার কোলে মাথা রেখে শোনাবো আর স্বপ্নে হারাবো বহু দূর।
গাধার খাটুনি খেটে পয়সা জমিয়েছি
একটু একটু করে নিজের বানানো বিয়ের পালকি নিজেই সাজিয়েছি।
শেষে তোমার বাবজান আমায় ছেলে ভাবতে পারেনি,
দিয়েছিলেন কঠিন শর্ত যা পূরণ করার সাধ্য আমার হয়নি।
দু মাসে দু বিঘে ধানি জমি কিনতে হবে
থাকতে হবে চার চার খানা হালের বলদ,
তবেই দিবেন বিয়ে
না হয় থাকতে হবে তোমার যাবার পথ চেয়ে।
আমার আর কথা রাখা হলো না,
তোমার বাবজান-ই গেলেন জিতে আমি হয়ে গেলাম তোমার চোখে কালো,
তোমার শেষ কথাটা মনে আছে আজো
“যে মরদ কথা রাখতে পারে না, তার মরাই ভালো।”
২১/১০/২০২০