শিরোনামহীন চিঠি
চিঠি লিখবো, অথচ শিরোনামে তোমাকে ডাকার মতো
উপযুক্ত একটা নামের অভাবে কেটে গেলো বহুকাল!
প্রিয়, প্রিয়তমা, ভালোবাসা, আমার তুমি কত কথাই লিখেছিলাম!
সামনাসামনি কতভাবেই তো ডাকা যায়!
শুধু লিখতে গেলেই যতো বিড়ম্বনা!
আগে ডায়েরি লিখতাম, শব্দের অলংকারে সাজিয়ে,
রোজকারের তোমাকে লিখে রাখতাম সেখানে!
মনে আছে, একবার ডায়েরি পড়ার বায়না ধরেছিলে?
দেয়নি আমি, সেখানে যে শুধু তুমি ছিলে!
পাছে ধরা পড়ে যায়, লজ্জায় ভোঁদৌড়ে পালিয়েছিলাম।
সন্ধ্যা থেকে রাত, রাত থেকে আবার সন্ধ্যা জীবনের কতো কথা।
কোনো কথা তোমাকে না বললে আমার পেট ভরে না!
কিচ্ছু হজম হয় না, সবকিছু তোমাকে বলা চাই-ই!
তুমি বিরক্ত হতে, কপাটকণ্ঠে বলতে একেমন আবদার?
তোমার মাঝে ডুবে গিয়ে, দুঃখ লুকানোর আবদার!
আজো প্রতিদিনই তোমার সাথে কথা বলি।
সারাদিনের সব কথা, কখন মন খারাপ হলো!
কখন কান্না পেলো, কখন নিজেকে একা লেগেছে!
অফিসের পিওনটার ছেলে মারা গেলো!
ট্রাষ্ট বাসের জন্য কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি!
ছাতিম ফুল ফুটেছে, কোন সকালে শিউলি কুড়িয়ে এলাম!
আজ বিভক্তির সেই কন্ঠ শুনি না!
তাই অভিমানের গাঢ়তম রূপে লিখেছিলাম রূপকথা।
আমাদের যুগল সময়টা স্বপ্নের মত মনে হয়!
আজ কদিন হলো বিছানায় পড়ে আছি!
হয়তো সময় ফুরিয়ে আসছে আমার!
হয়তো গন্তব্যের খুব কাছাকাছি আমি!
ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমার।
এ ঘুম হয়তো আর ভাঙবে না!
এই ঘুম যদি আর না ভাঙে?
যদি আর কোনোদিন না জাগি আমি?
মাঘ কুয়াশার চেয়েও ঝাপসা,
চোখে ভাসে তোমার মায়াবী মুখ!
আলোর মোহ কাটিয়ে তাই লিখেছিলাম মায়াবতী।
ক্ষণেক্ষণে আমার শব্দরা সব হারিয়েছে!
আমার গলার আওয়াজটা আজ বিভৎস!
তোমার এখনকার ঠিকানা জানি না।
এই চিঠিও হয়তো কখনো পৌঁছাবে না।
ভাল থেকো বলার অধিকার তো নিজেরাই হারিয়েছি।
শামুক খোলসে আবৃত করেছি যাবতীয়;
কখনো তুমি,কখনো আমি!
ঝিনুকের বুকে মুক্তা ফলানোর মত কান্না যে আমাদেরও বুকে।
ভেতরটা শুধু ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়,
তবুও আমরা কাঁদতে পারি না সবার মত!
তুমি কান্নার মতো লুকানো ক্ষত নিয়ে ক্ষরণহীন হবে।
আমি চলে যাওয়ার পর-হয়তো লোকমুখে খবর পাবে!
অবজ্ঞা আর অভিমান করতে আমায় পাবেনা।
মৃত মানুষের সাথে টেলিপ্যাথি হয় কি-না জানা নেই!
তবে টের পেলেও তো আর বলতে পারবো না!
কবি হতে চেয়ে, শিরোনামে লিখেছিলাম কাব্য।