পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার সংগ্রাম…… স্বাধীন ভারত
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অর্থাত্‍ ১৯৪৫ সালে ভারতবর্ষ জুড়ে “ইংরেজ ভারত ছাড়” আন্দোলন তীব্রতর হয়। কিন্তু মহাত্বা গান্ধী সহ সব বড় বড় নেতা তখন সরাসরি ইংরেজদের হটাও আন্দোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।

মহাত্মা গান্ধীর দিক থেকে তাঁর “অহিংসা মনোভাব” এর কারণে হয়তো আন্দোলন বেগবান হচ্ছিল না। গান্ধীজীর মতে “যখন আমি হতাশ হই , আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালবাসার জয় হয়েছে । দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের কখনো অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সবসময়ই তাদের পতন ঘটে মনে রাখবেন সর্বদাই।” অপরদিকে নেতাজীর বক্তব্য ছিল,”তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু মহাত্বা গান্ধীর এই অহিংসা মনোভাব পছন্দ করতেন না। উনি চাইতেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এবং সেটা হবে সমর যুদ্ধ। তাই তিনি খুঁজছিলেন ঠিক সেই মুহুর্তে ইংরেজদের বিরুদ্ধে কোন পরাশক্তি আছে। সেই হিসেবে সে খুঁজে পায় জামার্নীকে আর ইংল্যান্ড তো তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনী। আর তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতবর্ষের অংশগ্রহনটা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ভালো ভাবে নেননি। তিনি হিটলারের কাছে গেলেন।

কিন্তু সেই মুহুর্তে হিটলার প্রচন্ড ব্যাস্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে। তাই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু অক্ষশক্তির আরেক শক্তিশালী রাষ্ট্র জাপানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এসময় জার্মান তাকে একটি সাবমেরিনে করে জাপানে পৌছে দেয়। জাপান নেতাজীর পরিকল্পনা শুনে, এতে মত দেয়। এবং প্রয়োজনীয় অর্থ ও সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে।

রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব নিয়ে ভারত আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ মূলতঃ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা গঠিত একটি সশস্ত্র সেনাবাহিনী। ১৯৪২ সালে এই বাহিনী গঠিত হয়। এর বাহিনী ভিতরে ভারতের স্বাধীনতাকামী মানুষ, ইংরেজ নির্যাতিত ভারতীয়, মুটে ও মজুর ছিল। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অর্থের অভাব থাকলেও নেতাজী সুভাসের অসাধারণ নেতৃত্বের ফলে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্যের একটি সুশৃঙ্খল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে।

জাপানী সহায়তায় বলীয়ান হয়ে এই বাহিনী ভারতের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভারতকে আক্রমন করে। [এখানে একটা বির্তক আছে যে কেন সে ভারতীয় হয়ে ভারতকে আক্রমন করলো? আসলে তার আক্রমন ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে]

জাপানের সহায়তায় আজাদ হিন্দ ফৌজ অতর্কিত আক্রমনে ভারতে ইংরেজরা কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে যায়। এক যুদ্ধের ভিতরে আরেক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারতের আরাকান, ইম্ফল, ময়রাং, বিষেণপুর প্রভৃতি স্থান সুভাষ চন্দ্র দখল করে নেন। এসব দখলকৃত জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্য ব্রিটেনের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা যুদ্ধবিমান ও কামান নিয়ে আক্রমণ শুরু করে।

ঠিক এই মুহুর্তে নেতাজীর দল একটু পিছপা হয়ে পড়ে। তখন তারা রেঙ্গুনে গিয়ে আবারো পুর্নগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কয়েক মাস ব্যাপী এ যুদ্ধে মারা যায় উভয় পক্ষের অনেক সৈন্য। কিন্তু ঠিক এই মূহুর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় পরাজিত হয় অক্ষ বাহিনী। তাই জাপানের আত্মসমাপর্নের ফলে বন্ধ হয়ে যায় আজাদ হিন্দ ফৌজের রসদ সরবরাহ। তারপর থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নিখোঁজ হন। কথিত আছে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। (তবে তাঁর এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে বির্তক আছে)

পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার সংগ্রাম…… স্বাধীন ভারত
স্বদেশের গান (গীতি কবিতা) তৃতীয় পর্ব
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

জাগো রে শ্রমিক জাগো রে কিষাণ জাগো রে সর্বহারা।
আগুন জ্বলুক দিকে দিকে, ভেঙে ফ্যালো পাষাণ কারা।

দেশের মাটিতে বিদেশী এসে,
শাসন চালায় শাসকের বেশে,

মানি না শাসন, মানবো না আমরা, রক্ত শোষক ওরা।
বিদ্রোহের আগুন জ্বালাও, করবো ওদের ভারত ছাড়া।

জাগ্রত চেতনা ভারতবাসীর হলো বুঝি আজিকে অবিচল,
কয়েদীরা কয়, হয়েছে সময় ছিন্ন করো কয়েদীর শৃঙ্খল।

গাও সবাই ভারতের জয়গান,
ছুটে এসো হিন্দু ও মুসলমান।

দেশের শত্রু, জাতির শত্রু ওরা, বিদেশী শাসক দল।
ঘুমায়ো না আর, জেগে ওঠো এবার, দেখাও বাহুবল।

দেশ ছেয়েছে অরাজকতায় ভারতবর্ষ আজি পরাধীন,
জাগ্রত চেতনা আনুক বিপ্লব, হোক ভারতবর্ষ স্বাধীন।

পরাধীন জাতি মানে না শাসন
স্বাধীনতার স্বপ্ন মাতৃমুক্তি পন,

রক্তের বিনিময়ে পাবো স্বাধীনতা নই মোরা পরাধীন।
রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দিকে দিকে তাই দেশ হবে স্বাধীন।