বিধবার বসন্ত
প্রিয় বসন্ত,
আবারও তব পুনরাগমনের সময় আসিয়া পড়িয়াছে।
সেই বার্তা আগাম রূপে জানাইতে ব্যস্ত, ওই দূরের পত্রহীন বৃক্ষে বসিয়া থাকা কোকিল পক্ষীটি।
বিলক্ষণ বুঝিতে পারিতেছি,
কেন সকলে তারে বসন্তের দূত বলিয়া সম্মোধন করে।
তোমার এই আগমনের সংবাদ পাহিয়া আনন্দে নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠিল কত শত প্রাণী।
ওই যে,
ইহ গঞ্জের চৌধুরীবাবু;
শোনা যাইতেছে তাহার বাসায় তব ফিরিয়া আসিবার আনন্দে মস্ত উৎসব হইতেছে।
বসিয়াছে গান বাজনার আসর।
পরিবারের নিমিত্ত দিবারাতি এক করিয়া ফেলা দিন মজুর মনুষ্যের দল;
আজ সকল পিছুটান ভুলাইয়া ভাঙের নেশায় মত্ত হইবে।
কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ;
সবে একে অন্যকে রাঙিয়া তুলিবে নানা রঙের আবির দ্বারা।
সকলে একত্রে মাতিয়া উঠিবে লাগাম ছাড়া আনন্দে।
কেবল আমিই জানালার ইহ প্রান্তে একান্তে বসিয়া অতীতের স্মৃতিচারণে মগ্ন থাকিব।
জ্ঞান হইতেছে?
কভু আমিও তোমার সহিত অসীম আনন্দে লিপ্ত হইয়াছি।
অতঃপর যখন আমার বিবাহের প্রস্তাব আসিয়াছিল;
ভাবিয়া ছিলাম;
এইবার বোধকরি চরণে বেড়ি পড়িবার সময় আসন্ন।
কিন্তু তাহা আর হইল কই?
বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি।
আমাকে বড় ভালোবাসিতেন।
সমগ্র পরিজনদের আড়ালে আমার গালে তিনিই সর্বপ্রথম রঙ স্পর্শ করিতেন।
আর তাহার সহিত সিঁথিতে কিঞ্চিৎ সিন্দুর।
তথা তোমারই বিলাসিতার সুর দ্বারা সমগ্র আলয় একত্রে মাতিয়া উঠিতাম।
আঙিনার সর্বত্র জুড়িয়া থাকিত লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আরও শত রঙের পদ চিহ্ন।
অধুনা প্রায় চার বৎসর হইয়া গেল।
সব যেন এখনও চক্ষু সম্মুখে।
অধুনা রঙ দেখিলে বড় ভয় হয় জানো?
মনে পড়িয়া যায় আমার তাহার কথা।
ইহ ভাবিয়া ক্রন্দনবোধ হয় যে, কেন সেকালে আমিও মরিয়া গেলাম না?
ওহে প্রিয় বসন্ত।
যদি এসব কহিয়া তোমায় কষ্ট প্রদান করিয়া থাকি,
তবে আমি ক্ষমা প্রার্থী।
প্রতিবারের স্বরূপ আবারও ফিরিয়া আসিও তুমি।
কেবল আমার মতন কাহারো কোনো ক্ষতি করিও না,
আঘাত হানিও না কাহারো জীবনে।
আবারও সময় আসিয়াছে শীতের বস্ত্রদের ক্ষীণ বিদায় জানাবার।
আবারও সময় আসিয়াছে বর্ষপঞ্জি বদলের প্রস্তুতি নেওয়ার।
আবারও তোমার করুণায় রঙ ফিরিয়া পাহিবে পত্রহীন বৃক্ষেরা।
কেবল আমার পতিহীন জীবনেই আর রঙ ফিরিয়া আসিবে না।
সমাপ্ত?