ময়ূরাক্ষী
আমি তখন, ক্লাস ইলেভেন
উল্কি দিয়ে, ওর নাম লিখেছিলাম হাতে;
ময়ূরাক্ষী…
অনভ্যস্ত শাড়িতে, ওর অগোছালো রূপ
আমাকে বাউল করেছিলো;
সেই প্রথম ভালোলাগা, ভালোলাগার বন্ধুত্ব
আমার প্রথম প্রেম ৷
স্কুল থেকে, প্রায়ই একসাথে বাড়ি ফিরতাম;
ফাল্গুনে, শিমূল হাতে নিয়ে;
শ্রাবণে, বৃষ্টিস্নাত হয়ে;
ভিজে যাওয়া ইউনিফর্মে, দুজন দুজনকে
বড় হতে দেখেছি;
ঠিক পরের বসন্তে, পলাশ এসেছিল-আমাদের মনে,
আরও আপন হয়েছিলাম, দুজন-দুজনার ৷
মনে আছে, এক জৈষ্ঠের প্রখর রোদের মধ্যে
দুজনে হেঁটে ছিলাম, বহুদূর পর্যন্ত
গল্প করতে করতে, মাটির পথ ধরে;
বিষয়বস্তু লাগতো না, থাকতো-
শুধুই কথা বলা, অনর্গল;
যেমন তৃষ্ণা মেটায় পাখি, তার চঞ্চুতে জল মেখে;
যেমন পরাগ গায়ে মেখে প্রজাপতি ওড়ে,
কাঞ্চন থেকে কামিনী;
যেমন ঝর্নার জল এসে মেশে,
নরম নদীতে, সম্পৃক্ত হয় অলক্ষ্যে;
আমি তেমনই, সম্পৃক্ত হতাম, মনে-প্রাণে;
মনের সমস্ত কুঠির, ছিদ্র, প্রকষ্ট, তনুকনা গুলি
ভরে উঠতো, কানায়-কানায় ৷
সম্পর্কের অস্তরাগে, একবার তাল কেটেছিল-উপনয়ন;
সেদিন, শত ব্লেডের দাগ টেনেছিলাম,
বা হাতের পাতায়;
আর সেই রক্ত দিয়ে, লিখেছিলাম-লেফাফা,
আমাকে ভুল বোঝনা, মৌ-
রক্তের রঙ যবে, হলুদ হয়ে যাবে;
ততদিন আমি, তোমার অপেক্ষায় থাকবো ৷
রক্তের রঙ যবে, কালো হয়ে যাবে;
সেদিনও আমি, তোমার অপেক্ষায় থাকবো ৷
আজ বহুদিন পর, যখন ঐ প্রগতি সংঘের
মাঠে বসে, সেকথা ভাবি;
যেখানে বহুবার, এসে বসেছিলাম,
ঐ ঝাউগাছটার নিচে;
ওর হাতে হাত রেখে, ওর গায়ের গন্ধ মেখে;
এখন সেখানেও, প্রত্যেক দিনের মতো
সন্ধ্যা নামে, ত্রিফলা জ্বেলে;
একা বসে থাকি…
শুধু জলন্ত সিগারেটের ছাই, ভারী হয়ে ঝরে পড়ে;
আর একলা সময়, হারিয়ে যায় অদূর অন্ধকারে ৷৷