জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে শ্বাশুড়িরা ভোরবেলা স্নান করে ঘটে জল ভরে নেন এবং ঘটের ওপর স্থাপন করেন আম্রপল্লব। সঙ্গে রাখেন তালপাতার পাখা। ১০৮টি দূর্বা বাঁধা আঁটি দিয়ে পূজোর উপকরণ সাজানো হয়। করমচা ফল-সহ পাঁচ থেকে সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে রাখতে হয় শ্বাশুড়িকে।

এরপর একটি সুতো হলুদে রাঙিয়ে তাতে ফুল, বেলপাতা দিয়ে গিট বেঁধে সাজানো হয়। এর পর মা ষষ্ঠীর পুজো করা হয়। জামাই এলে তাঁকে বসিয়ে সুতোটা হাতে বেঁধে দিয়ে শ্বাশুড়ি পাখার হাওয়া দিয়ে ‘ষাট-ষাট-ষাট’ বলে ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন।

বর্তমানে শহরাঞ্চলে অনেকেই এ ধরনের নিয়ম পালন না করলেও জামাইষষ্ঠীর দিন অবশ্যই জামাইদের নিমন্ত্রণ করেন। কোথাও কোথাও আবার শ্যালিকারা বাঁশের কঞ্চি বেঁকিয়ে ‘হার্ট শেপ’ তৈরি করে তাতে লালসুতো দিয়ে ধান বেঁধে সুন্দর আকৃতি করে ভগ্নিপতিকে উপহার দেন।

জামাই-ষষ্ঠীর অনুষ্ঠানের আচরণগুলোর প্রত্যেকটিই অর্থবহ।
যেমন:
ফুল, বেলপাতা দিয়ে সুতো বেঁধে দেওয়ার অর্থ, তোমার সঙ্গে আমাদের পরিবারের বন্ধন এবং আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার বন্ধন অটুট থাকুক ও সুখপ্রদ হোক।

পাখা দিয়ে হাওয়া করার অর্থ, তোমার সমস্ত আপদ-বিপদ দূরে যাক, শান্ত থাকুক পরিবেশ।

তিন বার ‘ষাট-ষাট-ষাট’ বলার অর্থ দীর্ঘায়ু কামনা করা।
ধান সমৃদ্ধি ও বহু সন্তানের প্রতীক। দূর্বা চিরসবুজ ও চির সতেজতার প্রতীক।

এ সব কিছুই জামাইয়ের মঙ্গলের জন্য যেমন শুভ কামনা, তেমনই মেয়ের সুখে-শান্তিতে থাকার জন্য মঙ্গল চিন্তা এবং সুন্দর সাংসারিক জীবন যাপনের জন্য মা ষষ্ঠীর কাছে প্রার্থনা।

এটা একটা সামাজিক প্রথা মাত্র। জামাই-এর সাথে আপ্যায়ন করতে হবে মেয়েকেও। তা না হলে সমাজজীবন ও পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি আসে না। আসতে পারে না।  আজকের জামাইষষ্ঠীর পূণ্য শুভক্ষণে সব জামাইবাবুদের জানাই
আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

শুভ জামাই ষষ্ঠী
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আজিকে জামাই-ষষ্ঠী পূণ্য শুভদিনে,
জামাইকে দিতে হয় নব বস্ত্র কিনে।
জামাই ষষ্ঠীর দিন ভারি ধূম পড়ে,
হাসিখুশি বাক্যালাপ সারাদিন ধরে।

সামাজিক প্রথা এই জানি ভালমতে,
এ নিয়ম আসে চলে যুগ যুগ হতে।
আনন্দের স্রোত বয় প্রতি ঘরে ঘরে,
আয়োজন করে কত জামাতার তরে।

বেগুন পটল ভাজা, ঝোল ইলিশের,
আলুভাজা উচ্ছেভাজা, চাটনি আমের।
যত্ন সহকারে কত হয়েছে রন্ধন,
ইলিশের মাথা দিয়ে সুস্বাদু ব্যঞ্জন।

চিনিপাতা দই আর সাথে রাজভোগ,
খিলিপান তার সাথে করা হয় যোগ।
আজিকে জামাই-ষষ্ঠী পূণ্য শুভক্ষণ,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।